শিরোনাম
শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কৃষিজমির মাটি বিক্রির হিড়িক

হারাচ্ছে উর্বরতা, কমছে ফসল উৎপাদন

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

কৃষিজমির মাটি বিক্রির হিড়িক

মাটি কেটে তোলা হচ্ছে গাড়িতে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে কৃষিজমির ওপরিভাগের মাটি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। আইন অমান্য করে প্রতিদিনই উপজেলার আশিদ্রোন, সিন্দুরখান, মির্জাপুর, ভুনবীর, কালাপুর ও সদর ইউনিয়নে কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছেন কিছু ব্যবসায়ী। এসব মাটি দিয়ে ভরাট হচ্ছে বাসাবাড়ির ভিটা। আর ওপরিভাগের মাটি কেটে ফেলায় উর্বরতা হারাচ্ছে জমি। কমছে সফল উৎপাদন ক্ষমতা। জানা যায়, প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে কিছু অসাধু ব্যক্তি জমির মালিকদের নগদ টাকার লোভ দেখিয়ে মাটি কেটে নেন। সরেজমিন উপজেলার উত্তরসুর, দক্ষিণ উত্তরসুর, লামুয়া, কড়ইতলা, খলিলপুর, টিককিয়া ও আশিদ্রোন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের জমি খালি পড়ে আছে। প্রকাশ্য দিবালোকে জমি থেকে মাটি কেটে তোলা হচ্ছে ডায়না গাড়িতে। একে একে মাটিভর্তি গাড়ি চলে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। মাটিবোঝাই গাড়ি চলাচলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। কোনো জমির ওপরিভাগের ছয় ইঞ্চি, কোনোটিতে আট আবার কোনো জমি থেকে ১০ ইঞ্চি গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে বর্ষা মৌসুমে পাশের উঁচু জমির আইল ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া নিচু জমিতে পানি নেমে শুকিয়ে যাবে উঁচু জমি। জানা যায়, সড়কের পাশের ১ কেয়ার জমির মাটি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। একটু নিচু এলাকার মাটি ৫-৬ হাজার টাকা কেয়ার। আবার কোথাও ১০০-২০০ টাকা গাড়ি হিসাবে মাটি বিক্রি হচ্ছে। লামুয়া গ্রামের শাহ্ নেওয়াজ বলেন, জমিতে ধান ভাল হয় না। তাই মাটি বিক্রি করেছি। আধ কেয়ায় জমির মাটি বিক্রি করে ৫-৬ হাজার টাকা পাব। বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মদন গোপাল সাহা বলেন, জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। এটাই টপ সয়েল। এলাকাভেদে জৈবিক প্রক্রিয়ায় টপ সয়েল তৈরিতে ১০০ থেকে ৫০০ বছর সময় লাগে। মাটির এই অংশেই ফসল বেড়ে ওঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। টপ সয়েল থেকেই বীজ প্রয়োজনীয় জীবনীশক্তি গ্রহণ করে। এ অংশ একবার কেটে নিলে জমিতে মৃত্তিকা প্রাণ থাকে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘মাটি কেটে ফেলায় জমির জৈব উপাদান চলে যাচ্ছে। এতে স্থায়ীভাবে ক্ষতি হচ্ছে জমি। উপজেলা প্রশাসন থেকে মোবাইল কোর্ট চালানো হচ্ছে। এই অভিযান আরও জোরদার করলে জমি রক্ষা পাবে।’ শ্রীমঙ্গলের ইউএনও আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, ‘আমাদের অভিযান আরও জোরদার করা হবে। এ ছাড়া যার জমি থেকে মাটি কাটা হবে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর