শনিবার, ৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

পানির অভাবে অনাবাদি দেড় শ বিঘা জমি

হিলি প্রতিনিধি

পানির অভাবে অনাবাদি দেড় শ বিঘা জমি

দিনাজপুরের হিলিতে সেচপাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় পানির অভাবে ১৫০ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করতে পারছে না কৃষক। ফলে অনাবাদি থেকে গেছে ১৫০ বিঘা জমি। বিদ্যুৎ অফিসে শত ধরনা দিয়েও সেই সেচপাম্পে মিলছে না বিদ্যুৎ সংযোগ। তাই পানির অভাবে মাঠ প্রস্তুত করেও বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না কৃষক। সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ১৫০ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করতে পারবেন কি না সেই দুশ্চিন্তা আর হতাশায় দিন কাটছে এসব কৃষকের। অতি দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে বাধ্য হয়ে আন্দোলনে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা। শষ্যভান্ডারখ্যাত দিনাজপুরের হিলির চারদিকে এখন চলছে বোরো ধানের চারা রোপণের ভরা মৌসুম। ঠিক তখনই  সেচের অভাবে বীজতলা থেকে চারা তুলেও জমিতে রোপণ করতে পারছেন না হিলির সাদুড়িয়া গ্রামের কৃষকেরা। ইতোমধ্যেই পানির অভাবে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়ায় চিন্তারভাঁজ এসব কৃষকের কপালে। আর কয়েকদিন পেরিয়ে  গেলে সম্ভব হবে না বোরো ধানের চারা রোপণ। তাই এখনই জমিতে ধান লাগাতে চান এই কৃষকেরা তাই পানির সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের। গেল রবিশস্যতেও পানি না মেলায় মাঠেই শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে লাখ লাখ টাকার আলু, গম, সরিষাসহ অন্যান্য আবাদ। কৃষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, এই মাঠে আমার তিন একর জমি পড়ে রয়েছে শুধু পানির অভাবে ধান রোপণ করতে পারছি না। লাইন লাগাচ্ছে আজ পানি দেবে কাল দেবে এভাবে করতে করতে সব শেষ। পানির অভাবে আলু ও ধানের বীজ সব মরে শেষ হয়ে গেছে। আজ হবে কাল হবে করতে করতে দিন তো শেষ হয়ে যাচ্ছে কোনো তো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। অপর কৃষক আবদুস সালাম বলেন, আপনাদের কাছে আমাদের আকুল আবেদন দ্রুত পানির সমস্যা সমাধানের জন্য সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন এক ইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে আর এখানে আমাদের শত শত বিঘা জমি পড়ে রয়েছে। আমরা বিদ্যুতের কোনো সংযোগ পাচ্ছি না যার কারণে জমিতে পানি পাচ্ছি না আমরা জমি লাগাতে পারছি না। আমরা কীভাবে বিদ্যুতের সংযোগ পাব দ্রুত জমিতে পানি দিতে পারব দ্রুত এই ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। অপর কৃষক সেলিম হোসেন বলেন, বোরিং করার পর সব দফতরে ঘুরেছি যে এখানে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হোক কিন্তু কেউ আমাদের এই দুঃখটা বুঝছে না। যদি দুয়েকদিনের মধ্যে বা এখনই বিদ্যুতের সংযোগটি দেয় তাহলেও আমরা জমিগুলো লাগাতে পারব। কিন্তু অতি দ্রুত যদি এই সেচপাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়া হয় তাহলে বাধ্য হয়ে আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না আমাদের।

কৃষক মশিউর রহমান বলেন, এবারে গোটা মৌসুম চলে যাচ্ছে সরিষা লাগাতে পারিনি আলু লাগাতে পারিনি সব জমি পড়ে রয়েছে। এসব জমিতে পানির জন্য এখানে অনেক টাকা ব্যয় করে বোরিং করেছে। তাই যত তাড়াতাড়ি এই সেচপাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে তত তাড়াতাড়ি আমরা জমিগুলোতে ধান রোপণ করতে পারব। কিন্তু কী যে হয়েছে এখানে অনেক দফতরের লোকজন আসছে দেখে যাচ্ছে কিন্তু কেউ কোনো সাড়া দিচ্ছে না। সেচপাম্প মালিক বলাই চন্দ্র বলেন, গ্রামের শত শত বিঘা জমিতে ফসল ফলানোর জন্য এই সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে আজকে আমাদের বেহাল অবস্থা। তাদের টালবাহানার কারণে দীর্ঘদিন থেকে সেচপাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছি না। এতে করে এই সেচপাম্পের আওতাধীন ২০০ থেকে ২৫০ বিঘা জমি পড়ে রয়েছে শুধু সেচের অভাবে এই জমিগুলোতে বোরো ধান রোপণ করা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয় এসব জমিতে কৃষকরা গম, সরিষাসহ কোনো ধরনের রবিশস্য আবাদ করতে পারেনি। পল্লী বিদ্যুতে গিয়ে দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। আজ যাব কাল যাব এভাবে তারা কালক্ষেপণ করছেন। বোরিং করতে বলছে সেটাও কমপ্লিট কওে রেখেছি তাদের কথামতো সব করেছি কিন্তু তারপরও কেন জানি সংযোগ দিচ্ছে না। এতবার হাত পা ধরেছি যে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে অন্তত সংযোগটা দ্রুত দেন যেন আমরা ধান রোপণ করতে পারি। এখন তারা বলছেন তাদের কাজ সম্পন্ন করে সদর দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছে সেখানে যোগাযোগ করতে বলছে। তাহলে আমরা কৃষকরা এখন কোথায় যাব কার কাছে যাব আর কার কাছে বিচার চাইব। হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মমতাজ সুলতানা বলেন, বিদ্যুতের সংযোগের অভাবে হিলির সাদুড়িয়া গ্রামে সেচকার্য ব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যেই আমি জায়গাটি পরিদর্শন করে বিষয়টি পল্লী বিদ্যুতের এজিএমসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি। কীভাবে এটি সমাধান করা যায় ও অতি দ্রুত সেচকার্য শুরু করে জমিগুলোকে যেন বোরো ধান চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসতে পারি সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ হিলি সাবজোনাল অফিসের এজিএম বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, বলাইচন্দ্র নামের এক ব্যক্তির সেচপাম্পের সংযোগের জন্য আবেদন পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে সেটি স্টেকিং ভুক্ত করে তার আবেদনটি সদর দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তিন পোলের অধিক সাত পোলের মতো লাইন হওয়ায় সেটি আবারো অনুমোদনের জন্য সদর দফতর থেকে ঢাকায় হেড অফিসে পাঠানো হয়েছে। তাদের আদেশসহ মালামাল প্রাপ্তি সাপেক্ষে তার সেই সংযোগটি প্রদান করা হবে।

সর্বশেষ খবর