বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফজলি বাগান ধ্বংস করে প্লট বিক্রি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

ফজলি বাগান ধ্বংস করে প্লট বিক্রি

ফজলি আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভের এক বছর যেতে না যেতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই কোনো অনুমতি ছাড়াই বড় বড় ফজলি আম গাছ কেটে বাগানের মাটি প্লট আকারে বিক্রি হচ্ছে। বাগান মালিকরা বলছেন, পুরনো বিশাল গাছে ফজলি আমের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে গাছ কেটে ফেলছেন। আর অতি মুনাফার লোভে পরবর্তীতে বাগানের জমি প্লট আকারে বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যদিকে পরিবেশবিদরা বলছেন, আগামীতে এমন ধারা চলতে থাকলে ফজলি আম অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এ ছাড়া আম চাষিদের মাঝে সচেতনতা গড়ে না উঠলে ফজলি আম অলাভজনক পণ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। গত বছর রাজশাহী জেলার সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মানুষ আন্দোলন করে ফজলি আমের জিআই স্বীকৃতি পেয়েছিল। কিন্তু এখন জেলার বাগানগুলোয় কাটা হচ্ছে ফজলি আমের গাছ। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এ বছর ৭ হাজার ৯৯৫ হেক্টর জমিতে ফজলি আমের চাষ হয়েছে। এসব জমিতে রয়েছে ৫ লাখ ৯১ হাজার ১৫টি ফজলি আম গাছ। সূত্র মতে, জেলার অন্যান্য উপজেলার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি জমিতে ফজলি আমের চাষ হয় এবং সেখানেই বেশি পরিমাণে ফজলি আম গাছ কাটা হচ্ছে। মাত্র কয়েকদিন আগে সদর উপজেলার, মহারাজপুর, রানীহাটি, গোবরাতলাসহ বিভিন্ন এলাকার বড় বড় বাগান কেটে প্লট আকারে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া সম্প্র্রতি শিবগঞ্জ উপজেলার শেখটোলা গ্রামে সাড়ে ১৬ বিঘা আয়তনের একটি ফজলি বাগান কেটে ফেলতে দেখা গেছে। অন্যদিকে ধাইনগর, শাহবাজপুর, হাজারবিঘী, তেলকুপি এলাকাতেও বাগানের বড় গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। বাগান মালিকরা বলছেন, ৪-৫ বছর আগে থেকেই বাগান কেটে ফেলা শুরু হলেও গত দুই বছরে দেদার কাটা হচ্ছে গাছ এবং বাগানের জমি বসবাসের জন্য অতিরিক্ত দামে প্লট আকারে বিক্রি করা হচ্ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এক সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনপ্রিয় আম ছিল ফজলি। তবে বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই নাবি জাতের আম্রপালি আম আসায় প্রথম বারের মতো বাণিজ্যিকভাবে পিছিয়ে যায় ফজলি আম। কারণ আম্রপালি আম পাকে ফজলির সময়ই। আকার ও স্বাদের আকর্ষণীয় হওয়ায় আমপ্রেমীরা ফজলির বিকল্প হিসেবে সাদরে গ্রহণ করে আম্রপালি আমকে। ফলে চাষি ও ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কমতে থাকে ফজলির প্রতি। ছোট গাছে বেশি ফলন হওয়ায় জেলায় প্রতিবছর আম্রপালি আম বাগান বাড়লেও নতুন করে কেউ আর ফজলির বাগান গড়ে তুলছেন না। বরং পুরনো যে ফজলির বাগানগুলো রয়েছে তাও কেটে ফেলায় অস্তিত্ব  সংকটে পড়ছে বাগানগুলো। কানসাটের আমবাগান মালিক রাসেল জাহান বলেন, ফজলি আমের গাছগুলো থেকে আগের মতো আম পাওয়া যাচ্ছে না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনক্ষমতা হারিয়েছে গাছগুলো। তাই উৎপাদন কমে যাওয়ার হতাশা থেকেই কেটে ফেলা হচ্ছে বাগান। এ ছাড়াও বড় গাছ হওয়ায় পরিচর্যা করতে সমস্যা হচ্ছে বাগানিদের। এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক। তিনি জানান, বড় গাছ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সম্পদ। এদিকে বড় গাছ কেটে ফেলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার। তিনি বলেন, বড় বড় গাছ কেটে ফেলা আম বাণিজ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর দিকও বটে।

পলাশ সরকার বলেন, চাষিরা এখন আলট্রা হাইডেনসিটি (অতি ঘন) বাগানের দিকে ঝুঁকছেন। পাশাপাশি গত এক দশকে ছোট গাছে ফলন বেশি এমন জাতগুলো সম্প্রসারণ হয়েছে জেলায়। চাষিরা যখন কোনো নতুন প্রযুক্তি পায় তখন পুরনো প্রযুক্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এটাই বাস্তবতা। তবে কৃষি বিভাগ চাষিদের মাঝে সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, যাতে তারা বড় গাছগুলো না কাটে।

তিনি আরও বলেন, অনেক চাষি বড় গাছ কেটে সেখানে অন্য ফসল চাষ শুরু করেছিলেন বা প্লট আকারে বিক্রির চেষ্টা করছেন তাদের আবারো আম চাষে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। কারণ বড় গাছ কেটে ফেললে জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এলাকার তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। এতে শুধু আম নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে অন্যান্য ফসলও। অন্যদিকে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন, আমের নতুন নতুন জাত পুরনো জাতের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। কাজেই কেউ যদি ফজলির বড় গাছ কেটেও ফেলতে চান তিনি যেন সেখানে ফজলি জাতেরই গাছ লাগান।

সর্বশেষ খবর