ফেনীর পরশুরামে বোরোর পাকা ধানে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নেওয়ার ঠিক আগেই দেখা দিয়েছে পোকার এ আক্রমণ। হঠাৎ পাকা ধানে বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণে মুহূর্তের মধ্যে পাকা ধান সাদা হয়ে যাচ্ছে এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা এ রোগকে গুনগুনির আক্রমণ বলে দাবি করছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষক নাজমুল হায়দার জানান, কীটনাশক স্প্রে করেও পোকার আক্রমণ থেকে ধানকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। পোকার আক্রমণ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এক জমি থেকে আরেক জমিতে। কৃষক মজুমদার বলেন, এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু পোকায় তাদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে। পরশুরাম উপজেলা কৃষি অফিস বলছেন এটি বাদামি গাছ ফড়িং। বাদামি গাছ ফড়িং মূলত পাকা ধানেই আক্রমণ করে। এ পোকা প্রথমে ধানের শিষের কচি ডগার রস চুষে খায়। ফলে ওই ধানের শিষ দুই-তিন দিনের মধ্যেই মরে সাদা হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এ পোকার আক্রমণ এতটা ভয়াবহ যে, ধান কেটে নেওয়ার পরও এ পোকার সংক্রমণ হচ্ছে। উপজেলার পৌর এলাকার কয়েকটি গ্রাম, বক্সমাহমুদ, মির্জানগর ও চিথলিয়ায় বিভিন্ন জমিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি জমিতেই পোকা আক্রমণ করেছে। উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সত্যনগর গ্রামের কৃষক আবদুল খালেক জানান, তার বেশির ভাগ জমিতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কীটনাশক স্প্রে করছ, কোনো কাজ হচ্ছে না। সব ধান মরে সাদা হয়ে গেছে। কৃষি অফিসের কোনো লোকজনকে তাদের বিপদে পাশে পাননি। বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের শাহরিয়ার বলেন, ‘আগামী সপ্তাহ থেকে ধান কাটার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সকালে জমিতে এসে দেখি পোকায় পাকা ধান খেয়ে ফেলছে। কীটনাশক স্প্রে করছি। কাজে আসছে না।’ উপজেলার বেশির ভাগ কৃষকরা অভিযোগ করেন তাদের এ বিপদেও কৃষি অফিসে কর্মকর্তাদের মাঠে পাওয়া যায় না। তাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও পাওয়া যায় না। কখনো মোবাইল রিসিভ করে কয়েকটি কীটনাশকের নাম বলে দেয়। সে কীটনাশকেও কাজ হয় না। উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনছুর আহাম্মদ জানান জানান, ভারতের সীমান্ত এলাকাজুড়ে লাইটিং, স্যাঁতসেঁতে জমিতে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি এবং ধানের চারা ঘন ঘন লাগানোর ফলে বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণ বেড়ে যায়। পাকা ধানে প্লেনাম, মিফসিন, নাইট্রো নামের ওষুধ পরিমাণ ও সময়মতো ছিটালে বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণ থেকে পাকা ধান রক্ষা পাবে। উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, উপজেলার কয়েকটি এলাকায় এবার পোকার আক্রমণ বেশি বলে মনে হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে। কৃষি অফিসের নির্দেশনা মেনে চললে পোকার আক্রমণ থেকে রেহাই পাবে বলে তিনি আশা করেন।