রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

বলেশ্বর নদীতে ভয়াবহ ভাঙন

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

বলেশ্বর নদীতে ভয়াবহ ভাঙন

শরণখোলার গাবতলায় ভাঙনকবলিত এলাকা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বর্ষা মৌসুম আসার আগেই বাগেরহাটের শরণখোলার বলেশ্বর নদীতে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। শরণখোলার বগী থেকে মোরেলগঞ্জের ফাসিয়াতলা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকার ১০টি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে এই ভাঙন। ভাঙনের ফলে ঝুঁকির মুখে পড়েছে বিশ্বব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকায় উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) মাধ্যমে বলেশ্বর নদীর তীররক্ষায় নির্মিত টেকসই বেড়িবাঁধটি। গত রবিবার শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ সাউথখালীর গাবতলা এলাকায় বেড়িবাঁধের পাশের প্রায় দুই বিঘা জমি গাছপালাসহ বলেশ্বর নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারে বলেশ্বর নদীর তীরে নির্মিত বেড়িবাঁধের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, তাফালাবাড়ী, রায়েন্দা ইউনিয়নের চালরায়েন্দা, রাজেশ্বর, জিলবুনিয়া, খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর মারকাজ মসজিদ, বটতলা, পূর্ব খোন্তাকাটা, এবং মোরেলগঞ্জ অংশের ফাসিয়াতলাসহ ১০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে রাজেশ্বর, রাজৈর বটতলা ও ফাসিয়াতলা এলাকার মূল বেড়িবাঁধেই ভাঙন আঘাত হেনেছে। নদীশাসন না করে বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে ভাঙনের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভাঙনকবলিত বাঁধের পাশের বাসিন্দারা। টেকসই বাঁধ বাস্তবায়ন সংস্থা ‘উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি)’ কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষে হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বাঁধটি হস্তান্তর করা হবে। প্রকল্পে নদীভাঙন কবলিত স্থানে নদীশাসনের কোনো কাজ নেই। তবে নতুন করে প্রকল্প গ্রহণের সুযোগ মন্ত্রণালয়ের হাতে রয়েছে। তবে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ‘সিইআইপি’ প্রকল্পের কাছে নদীশাসনের অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে বিষয়টি। স্থানীয়দের মতে, সিইআইপি ও পনি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বহীনতা এবং তদারকির অভাবে বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। ঝুঁকির মুখে পড়েছে বাঁধটি। বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়েও দেখা দিয়ে সংশয়। বিগত ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় সিডরের জলোচ্ছ্বাসে বলেশ্বর নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে শরণখোলায় সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এরপর এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের ৬২ কিলোমিটার টেসকই বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি। কিন্তু তিন বছর মেয়াদের এই প্রকল্পের কাজ ছয় বছরেও শেষ করতে পারেনি চায়না ‘সিএইচডব্লিউই’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভাঙনকবলিত গাবতলা এলাকার বাসিন্দা মো. ইউনুচ হাওলাদার জানান, বাঁধের বাইরে তার প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে অসংখ্য গাছপালা ছিল। হঠাৎ গাছপালাসহ দুই বিঘা জমি নদীতে তলিয়ে যায়। ভাঙন এলাকায় প্রায় ১০০ ফুট গভীর খাদ হয়েছে। বাঁধের পাশের বাসিন্দা কালাম মোল্লা, লুৎফর শেখসহ অনেকে জানান, তারা আতঙ্কে রয়েছেন। বর্ষা শুরু হলে ভাঙন আরও বাড়বে। তখন মূল বেড়িবাঁধও রক্ষা পাবে না। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ জানান, ‘সিইআইপি’ প্রকল্পে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ গাবতলা ও ফাসিয়াতলা এলাকায় নদীশাসনের অর্থ ধরা আছে। বর্ষার আগেই দুই স্থানে নদীশাসন করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর