ঝড়ের কবলে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে স্কুলঘর। শ্রেণিকার্যক্রম কখনো চলছে খোলা আকাশের নিচে আবার কখনো গাছতলায়। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে ভিজে একাকার হয়েছে শিক্ষার্থীরা। এমন চিত্র ফরিদপুরের মধুখালীর একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বেশ কিছুদিন ধরে এমন অবস্থা চলতে থাকলেও স্কুলভবন সংস্কারে মেলেনি সরকারি কিংবা ব্যক্তিগত অর্থ সহায়তা। পাঠদান অব্যাহত রাখতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের হাটঘাটা গ্রামে ২০০২ সালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। প্রায় দুই যুগ ধরে চার চালার একটি টিনের ঘরে পাঠদান কার্যক্রম চলে আসছিল। মাঝে মধ্যেই স্কুলঘর সংস্কারও করা হয়। কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ঘরটি একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ফলে পাঠদান তো দূরের কথা স্কুলে প্রবেশ করার মতো অবস্থাও নেই। শিক্ষকরা জানান, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ঘরটি একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের কাগজপত্র শিক্ষকের বাড়িতে রাখা হয়েছে। পাঠদান কার্যক্রম চলছে গাছতলায় ও খোলা আকাশের নিচে। বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ের পাশে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের বারান্দায় পাঠদান করা হয়। শিক্ষকদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। শিক্ষার্থীদের জায়গা সংকুলান হয় না।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রুখসানা পারভীন বলেন, ২০০৭ সালে নিয়াগপ্রাপ্ত হয়ে বিনা বেতনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান পরিচালনা করে আসছি। ২০১৩ সালে জাতীয়করণে বাদ পড়ে বিদ্যালয়টি। বর্তমানে এখানে চারজন শিক্ষক এবং শতাধিক শিক্ষার্থী আছে। পাঠ্যক্রম চলছে প্রাথমিকের সরকারি নিয়মানুসারে। তিনি আরও বলেন, একটি চার চালা টিনের ঘর থাকলেও বর্তমানে তাতে ক্লাস নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। কখনো খোলা আকাশের নিচে, কখনো গাছতলায় আবার কখনো পাশের একটি ক্লাবের বারান্দায় পাঠদান চলে। আমাদের অবস্থা খুবই করুণ। সরকারের কাছে দাবি, দ্রুত স্কুলঘর মেরামত করে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়টি নিবন্ধনের ব্যবস্থা করার। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল বলেন, অনগ্রসর এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। চেষ্টা করছি ভবন সংস্কারের জন্য। সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে ভালো হতো। তিনি জানান, ভবন ভাঙাচোরা হওয়ায় দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
মধুখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, যেখানে শিক্ষা আছে সেখানেই বই বিতরণের সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। সে মোতাবেক চাহিদা মতো বিদ্যালয়টিতে বই দেওয়া হয়। যেহেতু বিদ্যালয়টি নিবন্ধনকৃত নয়, ফলে সহযোগিতা করার তেমন কিছুই নেই। মধুখালীর ইউএনও মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, বিদ্যালয়টি নিবন্ধনকৃত নয়। তারপরও ঘরটি সংস্কারের জন্য সরকারি পর্যায়ে কতটুকু সাহায্য সহযোগিতা করা যায় চেষ্টা করা হবে।