আগস্টে সরকার পতনোত্তর অবস্থায় নারায়ণগঞ্জের শিল্প খাতে নানামুখী সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। এলসি খুলতে না পারা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা, রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, শ্রমিক অসন্তোষ ও অর্ডার বাতিল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি বেড়েই চলেছে। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারলে নারায়ণগঞ্জের শিল্প খাত বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন শিল্পমালিকরা।
বিভিন্ন কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে অনেকেই এলসি খুলতে পারছেন না। ফলত তুলা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কটন ক্রাইসিসের কারণে সুতার দাম বেড়ে গেছে। অনেক স্পিনিং মিল সুতা দিতে পারছে না। তারা বলেন, সুতা না থাকলে অর্ডার নিতে পারব না। আর অর্ডার নিতে না পারলে অর্ডারগুলো অন্য দেশে চলে যাবে। এদিকে কোনো কোনো মহল শ্রমিকদের উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এরা কেউ দেশি হতে পারে আবার কেউ বিদেশি হতে পারে। শ্রমিক আন্দোলনের কারণে ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকলে কাজের চাপ পড়ে যায়। কারখানার কাজের ব্যাঘাত ঘটে। সময়মতো অর্ডার সরবরাহ করতে পারেন না কারখানার মালিকরা। প্রশাসনের এখনো পুরোপুরি সক্ষমতা আসেনি। তাই এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুর্বৃত্ত কিংবা যারা লুটপাট, চাঁদাবাজির সুযোগ খোঁজে তারা বিভিন্ন দলের নাম ভাঙিয়ে অথবা ব্যক্তিগতভাবে কুকাজ করে যাচ্ছে। ফকির ফ্যাশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির নাম ভাঙিয়ে সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ অনুসারীদের মাধ্যমে ১ হাজার কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছেন আমাদের কাছে। আমরা ছাড়াও আড়াইহাজারের বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ৩ কোটি, ৫ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। আমাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে না পেরে গ্রুপের চার কর্ণধারের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে আড়াইহাজারে। পরে আমরা উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন পেয়েছি। নজরুল ইসলাম আজাষ বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবু যে অত্যাচার করেছেন তার সঙ্গে ফকির গ্রুপ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি করার কোনো অভিযোগ নেই বরং যেখানে সমস্যা হয়েছে সেখানে গিয়ে আমি সমাধান করেছি। বিকেএমইএ সহসভাপতি মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল বলেন, বর্তমানে দলগুলোর উচিত যারা দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁবাদাজি করছে তাদের শক্ত হাতে দমন করা। বদনাম হলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, বিকেএমইএও চাঁদা দিয়েছে বাধ্য হয়ে। পরিস্থিতি তো স্বাভাবিক হচ্ছে না। আমার নিজেকেই নিজের রক্ষার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সব পর্যায়ের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে চেম্বার ও বিকেএমইএ সোচ্চার থাকবে। আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।