চলতি মৌসুমে লবণ ও পানের রেকর্ড দরপতন হয়েছে। এ কারণে কক্সবাজারে লবণ ও পান চাষিরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন। জেলার আটটি উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে মহেশখালী উপজেলার ৭০ শতাংশ মানুষ লবণ ও পান চাষের ওপর নির্ভরশীল।
লবণ চাষিরা জানিয়েছেন, বর্তমানে মণপ্রতি লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। গত ৭-৮ বছরে এত কম দামে লবণ বিক্রি হয়নি। গত মৌসুমে উৎপাদনকালে বিক্রি হয়েছিল সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা। বর্ষা মৌসুমে বিক্রি হয়েছিল ৫৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই দরপতন হয়েছে। মৌসুমের প্রথম লবণ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা। এরপর কমতে কমতে এখন ১৭০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রতি মণ উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫০ টাকা। অন্যদিকে পানের প্রতি বিড়া (৮০টি) পান সর্বোচ্চ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। মৌসুমের শুরুতে বিক্রি হয়েছিল ৩৫০ টাকা। গত মৌসুমে সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। চাষিরা জানিয়েছেন, বরজে ১০ শতক জমিতে পান উৎপাদনে খরচ হয়েছে দেড় লাখ থেকে ২ লাখ টাকা। কিন্তু পান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ফলে প্রায় অর্ধেক টাকা লোকসান হবে। কক্সবাজার বিসিকের লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, ‘চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ লাখ টন। এখন পর্যন্ত ১৮ লাখ টন উৎপাদন হয়েছে। অবশিষ্ট দিনগুলোতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভাবনা নেই। আগামী মৌসুমের জন্য চাষিদের ঋণ বা প্রণোদনা দিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. বিমল কুমার প্রামাণিক বলেন, ‘পানের দরপতনের বিষয়টি দাপ্তরিকভাবে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সম্প্রতি কক্সবাজার সফরে এলে কৃষি উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিদের প্রণোদনা ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।’ কালারমারছড়ার লবণ ও পান চাষি রমিজ উদ্দীন বলেন, পান ও লবণ এখন পানির দরে।’ মহেশখালী পানচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘বেশির ভাগ পান চাষি বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে পানবরজ করেছেন। কিন্তু পান বিক্রি করে অধিকাংশই এ ঋণ শোধ করতে পারেননি। অনেকে স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে সুদে ঋণ নিয়েছেন। মৌসুম শেষ হলেও এখনো স্বর্ণালংকার বন্ধক থেকে ছাড়াতে পারেনি। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে ধারদেনা করেছেন চাষিরা। অধিকাংশ ঋণ শোধ করতে পারেননি। কক্সবাজার লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি শাহাব উদ্দীন বলেন, এক কানি জমির বর্গাদাম ৫০ থেকে ৭০ হাজার। পলিথিন, শ্যালোমেশিনের তেল ও অন্যান্য খরচ মিলে একমণ লবণ উৎপাদনের খরচ পড়েছে প্রায় ৩৫০ টাকা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা।’ কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছর মৌসুমের শুরুতে সক্রিয় হয়ে ওঠে লবণশিল্পের দুশমন আমদানিকারী একটি সিন্ডিকেট।