বর্ষা এলেই শুরু হয় পদ্মা নদীর ভাঙন। এ কারণে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আতঙ্কে থাকে ফরিদপুরের পদ্মাতীরবর্তী হাজারো পরিবার। এবারও পদ্মায় হঠাৎ পানি বাড়ায় শুরু হয়েছে ভাঙন। ১৫ দিনে চরভদ্রাসনের চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের পাঁচটি পরিবারের ভিটেমাটি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। জেলার সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার পদ্মাতীরবর্তী গ্রামগুলোয় এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
এলাকাবাসী জানায়, দুই উপজেলার কমপক্ষে ৫০টি পরিবারকে এরই মধ্যে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। অনেকে বৃষ্টির দিনে খোলা জায়গায়, অনেকে নদীর পাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। অনেকে বাড়ির চাল খুলে অন্য জায়গায় রাখলেও খুঁটি ও বেড়া লাগিয়ে রেখেছে। সরেজমিনে পদ্মাতীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে দেখা গেছে, সদরপুরের দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের নুরুদ্দীন সরদার কান্দি, আবদুল হামিদ জঙ্গির কান্দি, আলেফ সরদার কান্দি ও জব্বার শিকদার কান্দির গ্রাম ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে। আকোটের চর ইউনিয়নের শয়তানখালী, ছলেনামা ও আকোটের চর গুচ্ছগ্রামের অন্তত ১১০টি পরিবার ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে। এ ছাড়া ঢেউখালী, চরনাসিরপুর ও চরমানাইর ইউনিয়নও রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে। কয়েক দিনে নদীপাড়ের কয়েকটি রাস্তা ভেঙে গেছে। ভাঙনে অনেকেই বসতভিটা হারাতে বসেছে। অনেকেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। চরভদ্রাসনের চরহরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্যা শিকদারের ডাঙ্গী, সদর ইউনিয়নের টিলারচর ও এমপি ডাঙ্গী, চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চরকালকিনিপুর, চরমির্জাপুর, চরতাহেরপুর, চরকল্যাণপুর, দিয়ারা গোপালপুর গ্রামেও পদ্মার ভাঙন বেড়েছে। চরঝাউকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মৃধা বলেন, ‘গত ১৫ দিনে এ ইউনিয়নের পাঁচটি পরিবারের ঘরবাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। অন্তত ৩ হাজার বিঘা বাদামের খেত পানিতে তলিয়ে গেছে।’
সদরপুরের আকোটের চর ইউপি চেয়ারম্যান আসলাম বেপারী বলেন, ‘পদ্মার ভাঙন তীব্র আকারে বাড়ছে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষ।’
চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরা খাতুন বলেন, ‘পদ্মার ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।’
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘ভাঙনের ফলে এখানকার মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে না। এ দুর্যোগ মোকাবিলায় নদীশাসনে টেকসই ব্যবস্থা প্রয়োজন।’ ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, ‘পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে ভাঙনের ঝুঁকিও বাড়ছে। আমরা ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলোয় পর্যবেক্ষণ করছি। খুব শিগগিরই টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’