‘মধুমতী নদীতে সাতবার বাড়ি ভেঙেছে। সরকার এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকার একটা ঘর দিয়েছে। কিন্তু এখানে এসেও চরম বিপাকে পড়েছি। কয়েক দিন আগে সাপ দেখতে পেয়ে ভয়ে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। সাপ, পোকামাকড়ের ভয়ে রাতে ঘুম হয় না।’ এভাবেই বলছিলেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের চরকাতলাসুর গ্রামে ‘স্বপ্ননগর আশ্রয়ণ প্রকল্প’-এর বাসিন্দা সুফিয়া বেগম। মধুমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে জলাবদ্ধতায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে এখানে বসবাস করা ২৫০ পরিবার। এক সপ্তাহ ধরে তারা এ দুর্ভোগে আছে। বাধ্য হয়ে অনেকে ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন- জানায় সেখানকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশির ভাগ ঘরের মেঝে ও রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছে নোংরা পানি। তলিয়ে গেছে টয়লেটের রিং। নোংরা পানির দুর্গন্ধে অসহনীয় হয়ে পড়েছে পরিবেশ। আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাওয়ার রাস্তায় কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও তার চেয়ে বেশি। প্রতিটি ঘরের সামনে পানি প্রায় হাঁটু সমান। ছোট শিশুরা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে নোংরা পানি। ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দারা। পাশাপাশি সাপ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, স্বপ্ননগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে ভুল জায়গায়। যেখানে ১৫ বছর আগে মধুমতী নদীর প্রবাহ ছিল। পরে চর জেগে ওঠে। সেই চরেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৫০টি ঘর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চরকাতলাসুর গ্রামে ৩৩ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয় স্বপ্ননগর নামে একটি আবাসন এলাকা। এখানে নির্মাণ করা হয় ২৫০টি ঘর। ভূমিহীন ও ঘর হীন- এমন পরিবারগুলোর ঠাঁই দেওয়া হয় এসব ঘরে। তবে সরকার ঘোষিত উপহারের এ ঘরগুলো নিচু জায়গায় নির্মাণ করায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা। পানিবন্দি হওয়ার কারণে দিন আনা দিন খাওয়া এসব মানুষ একপ্রকার বেকার হয়ে পড়েছেন। তিন বেলা খেতেও পারছেন না অনেকেই।
ইউপি সদস্য বিল্লাল মোল্যা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করা এসব মানুষ খুব দরিদ্র। তারা দিন আনে দিন খায়। তারা সকালে কাজে বের হয়, আর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসে। সারাদিন তারা বাইরে কাজে থাকেন। কিন্তু এখন তারা কাজকর্ম করতে পারছে না। তারা খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এটি উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হবে। আলফাডাঙ্গা ইউএনও রাসেল ইকবাল বলেন, জলাবদ্ধতার বিষয়টি জেনেছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সহায়তার চেষ্টা করা হবে।