মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ও হামলা মামলার ভয়ে পুরুষশূন্য হয়ে পড়ছে আট গ্রাম। সম্ভ্রম হারানোর ভয়ে আতংকে আছেন গ্রামের নারীরা। মস্তফাপুর ইউনিয়নের মস্তফাপুর, চাপাতলী, আমবাড়ি, সুচিয়ারভাঙ্গা, খাকছড়া, বালিয়া, পর্বতবাগান, জয়ার গ্রামগুলিতে এখন বিরাজ করছে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা। এলাকার হাট-বাজারে উপস্থিতি কমে গেছে। আতংকে রাস্তা ঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে।
গত ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী কুদ্দুস মল্লিক ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সোহরাব হোসেন খানের সমর্থকদের মাঝে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী সোহরাব খান আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুদ্দুস মল্লিকের বিরুদ্ধে জাল ভোট দিয়ে জয়ী হওয়ার অভিযোগ এনে কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। সেই কোন্দলের জের ধরেই গত শুক্রবার দুপুরে পরাজিত প্রার্থী তার সমর্থকদের নিয়ে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলায় সাতজন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। এ সময় কুদ্দুস মল্লিক সমর্থকদের অন্তত ১৫ টি বাড়ি-ঘর-দোকানে ব্যাপক ভাংচুর চালায় সন্ত্রাসীরা। ঘরের মূল্যবান সম্পদ লুট, ভাংচুর এমনকি ঘরের খাদ্য শস্যও লুট করা হয়। হামলার শিকার হন নারী ও শিশুরাও।
পরেরদিন শনিবার দ্বিতীয় দফায় আবার দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় দু'জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় আরও আটজন। দুই দিনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শতাধিক বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগিদের। সরেজমিনে মস্তফাপুর, চাপাতলী, আমবাড়ি, সুচিয়ারভাঙ্গা, খাকছড়া, বালিয়া, পর্বতবাগান ও জয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রাস্তাঘাটে লোক চলাচল নেই বললেই চলে। মস্তফাপুর এলাকার বাসিন্দা মেহেদীসহ অনেকে জানান, হামলা-মামলার ভয়ে মানুষ এলাকা ছাড়া। পুলিশ কাকে কখন গ্রেফতার করে সেই ভয়ে অনেকেই হাটে-বাজারে আসছে না। অন্যদিকে যে কোন সময় হামলার ঘটনাও ঘটতে পারে। এ আশংকা থেকেও কেউ কেউ এলাকা থেকে বাইরে চলে গেছেন। সুচিয়ারভাঙার গৃহবধূ রাত্রি আক্তার জানান, রাতে আমরা ভয়ে থাকি- কখন কি হয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা বাড়ি-ঘরে হামলা ও লুটপাট করছে। আমরা আতংকের মাঝে আছি।
মাদারীপুর সদর থানার ওসি জিয়াউল মোর্শেদ জানান, হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পাঁচটি পৃথক মামলা হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে ২০ জনকে গ্রেফতার করে কোর্টে চালান করা হয়েছে। তবে কাউকেই হয়রানি করা হয়নি। পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আছে। পুলিশ বাদি হয়ে আরও একটি মামলা হবে বলে জানান তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/১৭ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ