হাইকোর্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও ১৩ বছর কারাগারে আটক থাকা সাতক্ষীরার জবেদ আলী বিশ্বাসকে কেন ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের বেঞ্চ এই রুল জারি করে।
একইসঙ্গে জবেদ আলীকে ‘বেআইনিভাবে’ কারাবন্দি রাখায় বিবাদীদের ‘নিষ্ক্রিয়তা ও অবহেলা’ কেন সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৫ ও ৩৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না- তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন সচিব, হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-৩ এর তৎকালীন বিচারক, আইজিপি (প্রিজন) ও সাতক্ষীরার জেল সুপারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
‘খালাসের রায়ের ১৩ বছর পর কারামুক্ত হলেন জবেদ আলী’ শিরোনামে গত ৩ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে চিলড্রেনস চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন গত ১৯ মে এই রিট আবেদন করে। খালাসের পরও ১৩ বছর বিনাবিচারে আটক রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ক্ষতিপূরণের জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয় ওই রিট আবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কয়লা গ্রামের মৃত আমজেল বিশ্বাসের ছেলে জবেদ আলী বিশ্বাস। স্ত্রী ফরিদা খাতুন মারা যাওয়ার পর তার দুই মেয়ে লিলি (৮) ও রেক্সোনা (৫) জেলার তালা উপজেলার মানিকহার গ্রামে মামা আবুল কাসেমের বাড়িতে থাকতো। ১৯৯৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জবেদ আলী শ্যালকের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ওইদিন লিলি মারা যায়। এ ঘটনায় শ্যালক আবুল কাসেম বিষ খাইয়ে লিলিকে হত্যার অভিযোগ এনে জবেদ আলীর বিরুদ্ধে তালা থানায় হত্যা মামলা করেন। পরদিন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এরপর ওই মামলায় জবেদ আলীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
মামলায় ২০০১ সালের ১ মার্চ জবেদ আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জবেদ আলী হাইকোর্টে জেল আপিল করেন। ওই বছরের ১১ মে জবেদ আলীকে সাতক্ষীরা কারাগার থেকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্ট জবেদ আলীকে নির্দোষ ঘোষণা করে বেকসুর খালাস দেন। ওই বছরের ২৬ মার্চ হাইকোর্ট থেকে খালাসের আদেশ সাতক্ষীরা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২ এ পৌঁছায়। সাতক্ষীরার তৎকালীন অতিরিক্ত দায়রা জজ হাইকোর্টের আদেশ কারাগারে না পাঠিয়ে তা আদালতের রের্কডরুমে সংরক্ষণের নির্দেশ দেন।
জবেদ আলী বিশ্বাস বিভিন্ন সময় এ খালাসের বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ ও বিচারিক আদালতকে জানালেও তারা ব্যবস্থা নেননি। সম্প্রতি জবেদ আলী সাতক্ষীরার অতিরিক্ত সরকারি কৌসুলি (পিপি) জিল্লুর রহমানকে একটি চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানান। এরপর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান ও আরেক অতিরিক্ত পিপি ফাহিমুল হক সাতক্ষীরার দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে জবেদ আলীর মুক্তির জন্য আবেদন করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি আবেদনটির ওপর শুনানি হয়। আদালতের নির্দেশে ২৯ ফেব্রুয়ারি জবেদ আলীকে যশোর থেকে সাতক্ষীরা কারাগারে নিয়ে আসা হয়। এরপর ২ মার্চ আদালত তাকে মুক্তির আদেশ দিলে মুক্তি পান জবেদ আলী।
বিডি-প্রতিদিন/২৪ মে, ২০১৬/মাহবুব