সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চাঁদাবাজি ও অস্ত্রের ঝনঝনানি শুরু করেছে মেয়র হালিমুল হক মীরু। মেয়রের গুলিতে সাংবাদিক শিমুল হত্যার পর এমনটাই বলছেন শাহজাদপুরের উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতারা। তারা অবিলম্বে মেয়র ও তার ভাইদের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, বাবার চাকুরির সুবাদে ছোট বেলায় পাবনায় থাকত মেয়র মীরু। এসএসসি পাশের পর বিডিআরের সিগন্যাল কোরের ওয়্যারলেস অপারেটর হিসেবে চাকুরি নেয়। কিন্তু কিছুদিন পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে অশালীন আচরণ ও মারধর করে চাকুরি ছেড়ে পালিয়ে আসে। গ্রেফতার এড়াতে ১৯৭৮ সালে আত্মগোপন করে চলে আসেন দাদার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর পৌর সদরের নলুয়ার চরে। পরে শাহজাদপুর পৌর শহরে আসেন। সেই সময়ে জাসদের ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন এক-আধটু। ১৯৭৯ সালে জাসদ ছাত্র নেতাদের হাত ধরে শাহজাদপুর কলেজে এইসএসসিতে ভর্তি হন। কলেজ রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেন। ১৯৮১ সালে শাহজাদপুর কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ওই সময় থেকেই নিজেকে বিভিন্ন সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাসদের গণবাহিনীর সদস্যসহ নানাধরনের অস্ত্র ব্যবহারকারী বলে ভক্ত সমর্থকদের কাছে সারাক্ষণ মেতে থাকতেন গল্পে।
১৯৯১’র জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মশাল প্রতিকে নির্বাচনের পর মীরের সাধ জাগে বড় দলের এমপি হবার। ১৯৯৫ সালে জাসদ থেকে বের হয়ে প্রথমে বিএনপির সাবেক মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়ার শ্যালকের মাধ্যমে বিএনপিতে স্থানীয়ভাবে যোগদান করেন। কিন্তু তখনই তাকে নমিনেশন প্রদান করতে হবে এমন শর্ত জুড়ে দিলে তৎকালীন বিএনপির শাহজাদপুরের এমপি কামরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিশ তার নির্বাচনী এলাকায় তাকে বিএনপির কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করতে দেয় না। এরপর বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদেন। ১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগদানের পর ৯৬ সালে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে কাজ করার দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমবারের মতো বহিষ্কার হন। এরপর ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। ক্ষমতার দাপটে কথায় কথায় অস্ত্রের ভয় দেখানো হয়ে দাঁড়ায় তার নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
উল্লাপাড়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়াহেদুজ্জামান কাজল ও যুবলীগ নেতা দিনার জানান, মেয়র নির্বাচিত হবার পর থেকেই মীরু শাহজাদপুরে চাঁদাবাজি-বোমাবাজি ও অস্ত্রের ঝনাঝনি শুরু করেন। ঘটনার দিনের কথা উল্লেখ করে এ দুই নেতা জানান, ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মেয়রের হাতে দুটি ও তার ভাইয়ের হাতে একটি অস্ত্র রয়েছে। তবে কেন পুলিশ এগুলো উদ্ধার করছেন না? তাদের মতে মেয়রের কাছে আরো অনেক অবৈধ অস্ত্র রয়েছে।
পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ভিপি আব্দুর রহিম মেয়র মিরুর পরিবারকে সন্ত্রাস-দাঙ্গাবাজ উল্লেখ করে জানান, শাহজাদপুরে মেয়র মীরুই অস্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছেন। বিগত মেয়র নির্বাচনের সময়ও মেয়র ও তার বাহিনী অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে। রুপপুর, পারকোলা ও রামবাড়ীয়াতে গুলি বর্ষণ করেছেন। এ রকম অস্ত্রবাজি শাহজাদপুরে আর কখনো হয়নি। তার মুল উদ্দেশ্যেই অস্ত্র দিয়ে মানুষ নিয়ন্ত্রণ করে নেতৃত্ব টিকিয়ে থেকে কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হওয়া। এর আগে তার বাড়িতে আব্দুর রহিম নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেকেও হত্যা করা হয়েছে। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হতো। বৃহস্পতিবারও কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে হাত-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে নিমর্ম নির্যাতন করে।
শাহজাদপুরের সংসদ সদস্য হাসিবুল হক স্বপন জানান, মেয়র ও তার ভাইয়েরা আগ থেকেই উশৃঙ্খল ছিল। তারা কাউকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে জানেনা। সব সময় ক্ষমতার দাপট দেখাতো ও অস্ত্র প্রদর্শন করত। কারো সাথে কথা বলার সময়ও টেবিলে অস্ত্র রেখে দিতো। তিনি বলেন, মেয়র ও তার ভাইয়ের কাছে এখনো অবৈধ রয়েছে। অস্ত্রগুলো উদ্ধারের জন্য তিনি আইনশৃংখলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
শিমুল হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন
সাংবাদিক শিমুল হত্যার প্রতিবাদ ও খুনী পৌর মেয়র হামিদুল হক মীরুর ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে তাড়াশ রিপোটার্স ইউনিটির উদ্যোগে প্রেসক্লাব চত্ত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন, সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু, সাংগঠনিক সম্পাদ আমিনুল ইসলাম, সাংবাদিক মেহেরুল ইসলাম বাদল, আতিকুল ইসলাম বুলবুল ও সনাতন দাস প্রমুখ।