বাগেরহাটে সরকারি সুবিধাভোগী বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী কার্ডধারীদের মাঝে বরাদ্ধকৃত ভাতার টাকা বিতরণকালে কার্ডধারীদের কাছ থেকে খরচের কথা বলে ২ থেকে তিনশ টাকা করে আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট কার্ডধারীরা। আর এই টাকা নিয়েছেন বাগেরহাট সদরের গোটাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শমশের আলী ও অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
তবে ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি অশ্বীকার করলেও বাগেরহাট সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হুদার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে ইউপি চেয়ারম্যানের টাকা আদায়ের একটি ভিডিও ক্লিপসহ মঙ্গলবার বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের কাছে জমা দিযেছেন। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাগেরহাট সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হুদা বলেন, গোটাপাড়া ইউপি রোববার চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলীর নির্দেশে তার ইউনিয়নে সরকারি সুবিধাভোগী বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী কার্ডধারীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার একটি ভিডিও ক্লিপ সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস এটি দেখতে পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। গোটাপাড়া ইউনিয়নে সরকারি সুবিধাভুগী বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী কার্ডধারীর সংখ্যা ৯৭৭ জন। বয়স্ক, বিধবাদের মাসিক পাঁচশ টাকা করে এবং প্রতিবন্ধীদের ছয়শ' টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়।
তাদের নামে বরাদ্দ হওয়া টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করার নিয়ম থাকলেও গোটাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওইসব কার্ডধারীদের রোববার ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নিয়ে টাকা বিতরণ করেন। এসময়ে চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলী ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ খরচের কথা বলে সরকারি সুবিধাভোগী বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী কার্ডধারীদের কাছ থেকে জনপ্রতি আড়াইশ থেকে তিনশত টাকা হাতিয়ে নেয়।
বিষয়টি একজন মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারন করে সোসাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়। ইউএনও আরো বলেন, আমি সরজমিনে গিয়ে সরকারি সুবিধাভোগী ৫০ জনের অধিক কার্ডধারীর স্বাক্ষ্য নিয়েছি, তারা সবাই চেয়ারম্যানকে টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনসহ ওই ভিডিও ক্লিপটিও জমা দিয়েছি।
এবিষয়ে জানতে গোটাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব কার্ডধারীদের প্রত্যেকের নামে ব্যাংকে হিসাব খোলা রয়েছে। তারা ছাড়া অন্য কেউ টাকা উত্তোলনের সুযোগ নেই।
কার্ডধারীদের কাছ থেকে টাকা করে আদায় করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অগ্রণী ব্যাংকের দেপাড়া শাখা ব্যবস্থাপক শংকর কুমার দাস বলেন, আমি গত ১৪ মার্চ থেকে ছুটিতে আছি। বর্তমানে আমার সেকেন্ড অফিসার আবুল কালাম আজাদ ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি কেন অবৈধ ভাবে টাকা আদায় করেছেন তা আমার জানা নেই। টাকা বিতরণের নিয়ম জানতে চাইলে ওই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকের বসেই টাকা বিতরণের নিয়ম রয়েছে। কার্ডধারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ওই কর্মকর্তা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে টাকা বিতরণ করেছেন বলে আমি জানতে পেরেছি।
বিডি প্রতিদিন/২১ মার্চ ২০১৭/হিমেল