বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে বিজিবি’র সতর্ক অবস্থান থাকা সত্ত্বেও বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা শরণার্থীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। সীমান্ত পরিস্থিতি এখনও থমথমে। শনিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৫ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে তথ্য দিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদের অধিকাংশই উখিয়ার কতুপালংয়ের অননুমোদিত একাধিক শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের জলপাইতলী ও তমব্রুর নোম্যান্স ল্যান্ডে আরো প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। বিজিবির সদস্যরা গত তিনদিন ধরে পাহারা দিয়ে নির্দিষ্ট অবস্থানে তাদেরকে আটকে রেখেছে। আটকে পড়া শরণার্থীদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো।
সরেজমিন দেখা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের অদূরে জলপাইতলীর অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে প্রায় সাতশত নারী-পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশায় গত দুইদিন ধরে অপেক্ষা করছে। খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে নির্ঘুম অবস্থায় তারা মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছে। স্থানীয় লোকজন এবং অনুমোদিত-অননুমোদিত আশপাশের শরণার্থী ক্যাম্পে থাকা তাদের আত্মীয়-স্বজনরা শুকনো খাবার দিয়ে তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এছাড়া তমব্রু সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ড বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য অবস্থান নিয়েছে আরো অন্তত তিন হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী।
এদের প্রত্যেকেই গত বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার দিনে সীমান্তের ওই জায়গায় জড়ো হয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে। ওই দলের শরণার্থীরাও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। অনেক শিশু ও বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি সর্তক অবস্থান ও কড়া প্রহরার পরও শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে বিজিবির ঘুমধুম ২৪ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনজুরুল হাসান খান বলেন, বাংলাদেশ-মায়ানমারের দীর্ঘ এই স্থল সীমান্ত দিয়ে যেভাবে রোহিঙ্গারা শরণার্থী হিসেবে জড়ো হচ্ছে তা শতভাগ চেষ্টা করেও পাহাড়ের ঝিরি-খাদ অথবা গহীন অরণ্য দিয়ে কেউ কেউ হয়তো অনুপ্রবেশ করছে। তবে তা সম্পূর্ণই আমাদের অগোচরেই হচ্ছে। সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক শরণার্থী এখনো আমাদেও নজরদারিতে রয়েছে। আমরা তাদের কোনভাবেই অনুপ্রবেশ করতে দিচ্ছি না।
এদিকে জলপাইতলীর অস্থায়ী আশ্রয় স্থলে কথা হয় রোহিঙ্গা শরণার্থী লায়লা খাতুন, লবিছা বেগম ও সামারুখ খাতুনের সাথে। তারা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে মায়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। তারা প্রাণের ভয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার পাহাড়ি দুর্গম পথ পায়ে হেঁটে জলপাইতলী এসে আশ্রয় নিয়েছে।
এই অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া ৯ মাস বয়সী এক শিশুর মা রোকেয়া বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'আমার স্বামীকে মইগ্যারা (বিজিপি সদস্যরা) গুলি করে হত্যা করেছে শুক্রবার। আমি প্রতিবেশিদের সাথে আর কোন উপায় না দেখে এখানে চলে এসেছি।
এদিকে সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য রবিবার দুপুরে ঘুমধুম ও তমব্রু সীমান্তে পরিদর্শন করেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক সুনীল কুমার বণিকসহ প্রশাশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিডি-প্রতিদিন/২৭ আগস্ট, ২০১৭/ ইমরান জাহান