আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার প্রবাসীর বাড়ি থেকে শুক্রবার এক নারীর ৩৮ টুকরো লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়িটি ভাড়া নেওয়ার সময় কোনও কাগজপত্র জমা দেননি ভাড়াটিয়া। সে সময় নিজেকে আব্দুল মজিদ নামে পরিচয় দেন তিনি। এই নামেই ঝিনাইদহের পরিচয় ব্যবহার করে জামগড়া এলাকার একটি টেইলার্সে কারিগর হিসাবে কাজ করতেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরের নিবন্ধনে রাজধানীর রামপুরার ঠিকানা রয়েছে।
পুলিশের ধারণা, লাশ গুম করার জন্যই তথ্য গোপন করে বাড়িটির একটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি। ঘটনার ৩ দিন পরও গ্রেপ্তার হয়নি এমনকি চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় সন্দেহভাজন কাউকে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারেনি পুলিশ। এ অবস্থায় প্রকৃত হত্যাকারীরা গ্রেফতার হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হারুনের বক্তব্যে অনেক অসম্পূর্ণতা থাকলেও তাদের দেয়া তথ্য ও ধারণার ভিত্তিতেই কাজ করা হচ্ছে। তবে রবিবার পর্যন্ত ঘটনার কোনো রহস্য উন্মোচিত করতে পারেনি তারা, মেলেনি সহায়ক কোনো আলামত।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান সাফিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন- অনুসন্ধান করা হচ্ছে। হত্যা সাথে জড়িতদের সম্পর্কে এখনো কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। মোটিভ, আলামত ও সন্দেহ- এ তিনটি বিষয়কে প্রধান্য দিয়ে হত্যা ঘটনার তদন্ত চলছে। বিশেষ করে- কারা, কেন এবং কীভাবে, কী উদ্দেশ্যে তাকে ৩৮ টুকরা করেছে , কিন্তু মাথা এখনো পাওয়া যায়নি। পুলিশ বলছে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। সারাদেশে পুলিশ একাধিক টিম নারীকে ৩৮ টুকরা হত্যা সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করতে তৎপর পুলিশ। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন- ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম ও পুলিশের ক্রইম সিন সাইদুর রহমানসহ গঠিত তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি এখন ঘটনার ক্লু খুঁজতে নানা চেষ্টা করছেন। গত ৩ দিনে ধরে এ কমিটি ঘটনাস্থানগুলো ঘুরে আলামত সংগ্রহ করতে দেখা যায়, বাড়িটি এখন তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ । আশেপাশে অনেকের সঙ্গে কথা বলে কাজ এগিয়ে নিলেও রহস্য উদঘাটনের কোনো পথ বের করতে পারেনি বলে জানিয়েছে সূত্র। 'তদন্তে এখন পর্যন্ত বলার মতো কোনো তথ্যই মেলেনি। তবে সন্দেহ হয় এমন সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। '
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঘটনার সময় আগে পরে আশে পাশে বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানার সামনে গোপন ক্যামেরা (সিসিটিভি) ঘটনার আগে ও পরের সব ভিডিও ফুটেজ সিসি ক্যামেরায় থাকলেও ঘটনার সময়কার ফুটেজ সিসি ক্যামেরায় এখন পুলিশের হাতে। বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’তিনি বলেন, ‘পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী লাশ গুম করতে বাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ভাড়াটিয়া তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ বললেও তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরের নিবন্ধনের ঠিকানা রয়েছে রাজধানীর রামপুরায়।’ এ ব্যাপারে আব্দুল মজিদের আগের রুমমেট মেহেদী বাংলাদেশ প্রতিনিকে বলেন, ‘তাকে আমরা মজিদ নামেই জানতাম, তিনি বিবাহিত ছিলেন, বাড়ি ঝিনাইদহে। তিনি সত্য নাকি মিথ্যা বলেছেন তা জানি না। তিনি ৩০ আগস্ট টেইলার্স থেকে সব পাওনা হিসাব করে নিয়ে যান।’রবিবার জামগড়া এলাকার মাসুদ রানার ওই বাড়িটিতে গিয়ে জানা যায়, বাড়ির ভেতরে ১০টি আলাদা আলাদা কক্ষ আছে। বাড়িটির কেয়ারটেকারের নাম হারুন। তিনি তার স্ত্রী লিমা ও সন্তানকে নিয়ে বাড়িটির তত্ত্বাবধান করতেন। বাড়ির মালিক মাসুদ রানা দেশে থাকে না। প্রবাসী মাসুদ রানার স্বজনরাও কেউ এখানে নেই। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঈদের ছুটিতে বাড়িটিতে কোনও ভাড়াটিয়াও ছিলেন না। ঈদ উদযাপনের জন্য কেয়ারটেকার হারুন পাবনাতে তার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে ওই বাড়ির একটি কক্ষে থাকা ড্রামের ভেতর থেকে নারীর ৩৮ টুকরো লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ তাকে খবর দেয়। এরপর তিনি আশুলিয়াতে চলে আসেন।
হারুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভাই ভাই টেইলার্সে তিনি অবসর সময় আড্ডা দিতেন। টেইলার্সটি বাড়ি থেকে মাত্র একশ’ গজ দূরে। টেইলার্সের মালিক নূরে আলমের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের পরিচয়। মজিদ নামে এক ব্যক্তি ওই টেইলার্সের কারিগর হিসাবে দু’মাস আগে কাজ করতে আসেন। কারিগর মেহেদীর সঙ্গে তিনি একই রুমে থাকতেন। তখন এক রুমে মেহেদী, মজিদ ও রফিকুল তিনজন থাকতেন। আব্দুল মজিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন- আগস্টের মাসে ২৮ তারিখে স্ত্রী নিয়ে আসবেন, তাই একটা রুম দরকার। তখন এই বাড়ির একটি রুম ভাড়া নেন তিনি। তখন তার কাছে কাগজপত্র চাইলে তিনি পরে দিবেন বলে জানান। এরপর তাকে কক্ষটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ৩০ আগস্ট জিনিসপত্র ও স্ত্রীকে নিয়ে ওই কক্ষে ওঠেন মজিদ। এসময় তিনি কয়েকটি ড্রামও আসেন। মজিদকে রুমে তুলে দিয়ে ঈদ করার জন্য কেয়ারটেকার হারুন স্ত্রীকে নিয়ে পাবনাতে চলে যান বলেও জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে ভাই ভাই টেইলারের মালিক আলম জানান, জুলাই মাসের ২৪ তারিখ থেকে মজিদ তার দোকানে কাজে যোগ দেয়। এখানে তার কেউ না থাকায় দোকানের বিপরীতে বুলবুলের বাড়ীতে অপর এক কর্মচারীর সঙ্গে মজিদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন তিনি। ওই কক্ষে মজিদের সাথে কারিগর মেহেদী ও অপর এক যুবক রফিকুল থাকতেন। ৩১ আগস্ট দুপুরের আগেই পাওনা বুঝে নিয়ে চলে যায় মজিদ। এর আগে তাকে কখনোই তারা দেখননি বলেও দাবি স্থানীয়দের। শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে বাড়িটির একটি কক্ষ থেকে গন্ধ বের হলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তখন তারা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে দরজার তালা ভেঙে ড্রামটি উদ্ধার করেন। ড্রামের মধ্য থেকে এক নারীর লাশের ৩৮টি টুকরো উদ্ধার করে পুলিশ।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার