দিনাজপুরের বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকায় ছিল না ঈদের আমেজ। দুর্গত মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে এখন দিশেহারা। চারদিকে সব বিধ্বস্ত। বন্যায় তারা হারিয়েছে ঘর-বাড়ি, হারিয়েছে ফসল। একমুঠো খাবারের কষ্টে যেন তাদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
বিরলের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামে দেখা যায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ঘর-বাড়ি এখনো তৈরি করতে না পারায় ফাঁকা জায়গায় নির্বাক হয়ে রয়েছেন তারা। শুধু ঘর-বাড়ি নয়, বন্যায় তলিয়ে গেছে তার কষ্টার্জিত ফসল।
সবকিছু হারিয়ে অনেকটা পথে বসার উপক্রম। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের আর্তনাদ চলছে। তাই ঈদেও মুখে হাসি ছিল না। এ গ্রামের যারা প্রতিবার কোরবানি দিতেন এবার তাদের সে সামর্থ্য ছিল না।
ক্ষতিগ্রস্থ বানভাসিদের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনার কেউ নেই বলে অভিযোগ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা হায়দার আলী। ওই গ্রামের আখতারা বানু, আনিসুর রহমান, মোজাফ্ফর আলী, রুবিনা বানু সবাই একই কথা বললেন, 'আমরা বাঁচার লড়াই করছি। জমির ফসল গেছে, সংসারের সব গেছে। মাথা গোঁজার ঘরটাও গেছে। এসব কাটিয়ে উঠতে জানি না কতদিন লাগবে। '
দিনাজপুর সদরের শেখপুরা ইউপির দ্বিগুন গ্রামের নমি পাড়ার মাহতাবের স্ত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, সবকিছু নেয়ার আগেই বন্যার পানিত মাটির ঘর মাটিত মিশে গেছে। মাটিতে চাপা পড়ছে শোয়ার খাট, হাড়িপাতিল, চাল-ডালসহ সংসারের সবকিছু। হামরা সবাই না খাই পড়ি আছি। থাকার খুব কষ্ট। কোরবানি তো দূরের কথা খাওনের সমস্যাই কাটে না।
সাইদুর রহমান, আসমা বেগম, কিশোরী মরিয়ম, আজাদুর রহমানসহ অনেকে জানায়, এই গ্রামের নমিপাড়ার প্রায় ৫০টি পরিবারের সবারই মাটির ঘরগুলোর শেষ চিহ্নটি অবশিষ্ট নেই।
কৃষি শ্রমিক মাহতাব উদ্দিন জানায়, বন্যায় মাটির ঘর ধসে গেছে। ভেসে গেছে আসবাবপত্র ও খাবার সামগ্রী। ভাঙা দেয়াল ও খুঁটিতে টিন লাগিয়ে বর্তমানে কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
চিরিরবন্দর উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের দূর্গাডাঙ্গা গ্রামে দেখা যায়, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা এ এলাকার বেশিরভাগ কৃষক বিভিন্ন এনজিও থেকে কড়া সুদে ঋণ নিয়ে থাকেন উৎপাদিত ফসল থেকে টাকা পরিশোধ করেন এবং লভ্যাংশ দিয়ে পরিবার-পরিজনের ব্যয় নির্বাহ করেন। কিন্তু চলমান বন্যা তাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে।
কড়া সুদে ঋণ নিয়ে দুই বিঘা জমিতে রোপা আমন লাগিয়েছিলেন আজগার আলী। সবই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। পরিবারকে পেট ভরে দু’বেলা খেতে দিতে পারেন না। ঈদে আনন্দ তো দূরের কথা, চিন্তায় রাতে ঘুমও আসে না তার।
উল্লেখ্য, দিনাজপুরে বন্যায় ছয় লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘরবাড়ি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৫৯ হাজারের বেশি মানুষের। জেলায় এক লাখ ২৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭/ফারজানা