সাভারে সব কারখানা চালু না হওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া এবং গত দুই বছরের চামড়া বিক্রির বকেয়া টাকা না পাওয়ায় দেশের বৃহৎ কাঁচা চামড়ার বাজার নাটোরে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে।
বছরের মধ্যে দুটি ঈদে নাটোর শহরের রেলগেট এলাকায় অবস্থিত চামড়া বাজারে পা ফেলানোর জায়গা থাকে না। কুরবানী ঈদে সবচেয়ে বেশি কাঁচা চামড়ার আমদানী হলেও এই মৌসুমে বেকার সময় অতিবাহিত করছে রপ্তানীমূখী এ শিল্পের সাথে জড়িত নাটোরের কয়েকশ ব্যবসায়ী এবং শ্রমিক।
সত্তরের দশকে নাটোরে দেশের বৃহত্তম কাঁচা চামড়া বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বাজারে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চল বিভিন্ন জেলা থেকে চামড়া ব্যবসায়ীরা গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার চামড়া নিয়ে ভিড় জমাতো। এ ব্যবসা কেন্দ্র করে শহরের রেলগেট এলাকায় গড়ে ওঠে দেড় শতাধিক আড়ৎ। কাঁচা চামড়ার উপর জীবিকা নির্বাহ করছে কয়েকশ ব্যবসায়ী ও শ্রমিক। বিগত কয়েক বছর ধরে এ শিল্পে চলছে চরম সংকট। মূলত গত দুই বছরে নাটোরের ব্যবসায়ীরা হাজারীবাগের ট্যানারী মালিকদের কাছে পাওনা প্রায় ১ শ’ কোটি টাকা। যার একটি টাকাও তারা পরিশোধ করেনি। হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকরা এবার চামড়া কিনতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। মূলত সাভার হেমায়েতপুরে ট্যানারী শিল্প স্থাপন করতে গিয়ে তারা পূজি সংকটে পড়েছে। সরকার থেকে নতুন ভাবে লোন সেংশন না করার ফলে তারা চামড়া কিনতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে।
এছাড়া আর্ন্তজাতিক বাজারে চামড়া শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া এবং নতুন বাজার সৃষ্টি করতে না পারার কারণে চরম মন্দা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এ শিল্পে। তাছাড়া সরকার রপ্তানীমূখী প্রতিটি পণ্যের জন্য বোর্ড গঠন করে পৃষ্টপোষকতা করলেও গত ৫০ বছরে এ শিল্পের প্রসারে সরকার উদাসীন। কিন্তু এ শিল্পের বৃহৎ বাজার রয়েছে সারা বিশ্বে ।
পূজি সংকটের কারণে এবারকার ঈদে সরকার নির্ধারিত দামে প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও ছাগলের চামড়া ফুট হিসেবে বিক্রি না করে আকার ভেদে ৩০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমি বিক্রেতারা বলছেন, সরকার ছাগলের চামড়ার জন্য প্রতি বর্গফুট ২০ টাকা দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় প্রতিটি চামড়ার জন্য ১০০ থেকে ১২০ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা পুরো চামড়ার জন্য ৩০ থেকে ৫০ টাকায় কিনছে ।
নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি আলহাজ্ব লুৎফর রহমান লাল্টু জানান, অনেক ট্যানারির কাছে গতবছরের চামড়াও জমা আছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও চামড়ার দাম কম। আর কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে লবণ লাগে। এবার লবণের দাম ছিল অনেক বেশি। চামড়া সংগ্রহের মৌসুমে এসবের প্রভাব পড়েছে। কাঁচা চামড়ার দাম ও চাহিদা কমার কারণ হাজারীবাগের কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যবসার এই মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানান। হাজারীবাগে ১৫৫টি ট্যানারি ছিল। সেগুলোর মধ্যে ৬৭টি সাভারে চালু হয়েছে। বিসিক এ কারখানাগুলোকে প্রয়োজনীয় কাগজ হস্তান্তর না করায় তারা নতুন ভাবে ব্যাংকগুলো থেকে লোন নিতে পারেনি। গতবছর লক্ষ্যের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল। এবার লক্ষ্য পূরণ না হবে না। এ শিল্পের জড়িতরা বিশ্বব্যাপী বিকাশমান চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন