রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনায় খোলা সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রগুলো চালু থাকছে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সরকারি বরাদ্দ শেষ হওয়ায় ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়ার কথা থাকলেও মানবিক কারণে আরও তিনদিন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সোমবার রাঙামাটি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বিশ্বনাথ মজুমদার এ তথ্য জানান।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়ার সময় যারা সম্পন্ন ক্ষতিগ্রস্ত তাদের মধ্যে প্রতি পরিবারকে ২বান্ডিল টিন ও ছয় হাজার টাকা দেওয়া হবে। আর যারা আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের ৩০ কেজি চাল ও এক হাজার টাকা দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়ে সরকারিভাবে খোলা হয় ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে অবস্থান নেন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের অধিক মানুষ। পরে অনেকে চলে যাওয়ায় কারণে বর্তমানে ৬টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু রয়েছে। সে কেন্দ্রগুলো হলো- রাঙামাটি মাড়ি স্টেডিয়াম, রাঙামাটি মেডিক্যাল ছাত্রবাস, জিমনেসিয়াম, এনডিসিহিলের তিনটি কোয়াটার। এসব কেন্দ্রে বর্তমানে অবস্থান করছে ৭৭৮জন মানুষ। তারা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভিটেবাড়ি হারা। তাদেরও আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার মেয়াদ ঘনিয়ে আসছে। থাকতে পারবে আর মাত্র তিনদিন।
এ খবরে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরতদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। চোখে মুখে নেমে এসেছে অন্ধকারের কালো ছাপ। দিশে হারা অনেকেই। আশ্রয় কেন্দ্রের পাঠ ছুকলে কোথায় হবে এতোগুলো মানুষের সর্বশেষ মাথা গুজার ঠাঁই। এ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে আশ্রীত মানুষের দিন। মনে বিরাজ করছে চাপা আতঙ্ক। তাই কোনো অবস্থাতেই আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে নারাজ আশ্রীতরা।
এ বিষয়ে রাঙামাটি মারি স্টেডিয়ামের (আশ্রয় কেন্দ্র) আশ্রীত পারভিন আক্তার ও নূর জাহান বেগম জানান, জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে যার যার ব্যবস্থা করে নিতে। কিন্তু আমরা কোথায় যাবো পাহাড় তো আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। স্বামীসহ ভিটেমাটি হারিয়ে এখন আমরা সম্পন্ন নিঃস্ব। এ আশ্রয় কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হলেও আমরা এখান থেকে যেতে পারবনা। কারণ আমাদের যাওয়ার কোথাও জায়গা নেই।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসন বলছে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে যা যা দরকার তা করবে সরকার। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় এবং বিধ্বস্ত হওয়া ভিটায় আর কাউকে বাস করতে দেয়া হবে না। সরকারি উদ্যোগে জায়গা খুঁজে নিয়ে সেখানে বাড়িঘর তৈরি করে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে। কিন্তু ঘটনার দীর্ঘ আড়াই মাস পরও এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে আশ্রয় কেন্দ্র চালানোর অর্থ ও খাবারের বরাদ্দ।
এব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বলেন, সরকারি বরাদ্দ শেষ হওয়ায় কারণে আশ্রয় কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ২৮ আগস্ট সরকারি বরাদ্দ শেষ হয়েছিল। এরপর থেকে জেলা প্রশাসনের জরুরি ত্রাণ তহবিল হতে আশ্রয় কেন্দ্র চালানো হচ্ছে। তাই ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা ছিল। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে মানবিক বিবেচনা করে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের জরুরি ত্রাণ তহবিল হতে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো চালানোর জন্য সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। আমরা সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। এর মধ্যে আরও বরাদ্দ পাওয়া গেলে সেই বরাদ্দে যত দিন সম্ভব চালানো হবে। এখন পর্যন্ত রাঙামাটিতে ৫টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু রয়েছে। আর সম্পন্ন ক্ষত্রিগস্তদের পূর্ণবাসনের জন্য জায়গা খুঁজা হচ্ছে। নিরাপদ স্থানে জমি পাওয়া গেলে দ্রুত পূর্ণবাসন করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার