নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় 'প্রতারক' প্রেমিকা সাগরী খাতুনের (২৫) সন্ধানে এসে খুন হয়েছেন কাউছার হোসেন (৩৫) নামের এক যুবক। কাউছার হোসেন বরিশালের বাকেরগঞ্জের বাসিন্দা।
অভিযোগ উঠেছে, গত বুধবার রাতে প্রেমিকা সাগরী খাতুনের খোঁজে লালপুরের কদমচিলান ইউনিয়নের দাঁইড়পাড়া গ্রামে আসে যুবক কাউছার হোসেন। এসময় সাগরী খাতুন, তার বাবা ও ছোট ভাই মিলে তাকে মারধর করে। মারধরে জ্ঞান হারেয়ে ফেলে কাউছার।
মৃত্যু হয়েছে ভেবে পরিবারের লোকজন তার মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করতে থাকে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে প্রতিবেশীরা তাকে বড়াইগ্রামের বনপাড়া আমেনা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাউছারের পরিবারের কাছে খবর পাঠালে স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৩৭ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম রেজা মাস্টার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে এই হত্যাকাণ্ডের খবর লালপুর থানা পুলিশ জানলেও রহস্যজনক কারণে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয়রা জানান, লালপুরের দাঁইড়পাড়া গ্রামের শাহিনুর ফকিরের মেয়ে সুন্দরী মেয়ে সাগরী খাতুনের ৮ বছর আগে বিয়ে হয়ছিল বড়াইগ্রামের মাঝগাঁও ইউনিয়নের লাথুরিয়া গ্রামের দর্জি ফারুক হোসেনের সাথে। সেখানে তাদের একটি মেয়ে হয়। বিয়ের পর সাগরী বিভিন্ন পুরুষের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কারণে স্বামীর সাথে সম্পর্কের অবনতি হয়।
পরে স্থানীয় বিচারে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে ও মেয়েকে স্বামীর হাতে তুলে দিয়ে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটায়। পরে সাগরী বাবার বাড়িতে এসে বিভিন্ন পুরুষের সাথে প্রেমের অভিনয় করে প্রতারণার ফাঁদ ফেলে টাকা আয় করতে থাকে। এক পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাপে সাগরী আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেয়। সেখানে কাজ করার সময় পরিচয় হয় বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রিয়াজুল মির্জার ছেলে কাভার্ডভ্যান চালক কাউছার হোসেনের সাথে। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে আশুলিয়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে প্রায় দুই বছর একসাথে বসবাস করেন।
গত বুধবার সকালে সাগরী তার ভাই নাহিদ হোসেনের সহযোগিতায় আশুলিয়া বাসা থেকে ট্রাক যোগে কাউছারের সকল আসবাবপত্র ও নগদ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়িতে পালিয়ে আসে। রাতে খোঁজ নিয়ে কাউছার তাদের বাড়িতে আসলে বাবা শাহিনুর ফকির, ভাই নাহিদ হোসেন ও সাগরী সকলে মিলে তাকে মারপিট করে। এক পর্যায়ে কাউছার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এসময় তার মৃত্যু হয়েছে ভেবে মুখে বিষ ঢেলে দেয়া হয়।
আমেনা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আনছারুল্লাহ জানান, কাউছার হোসেনের শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও কাটা চিহ্ন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সাগরীর প্রতিবেশী কদিমচিলান ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, কাউছারের পরিবারের লোকজন মুঠোফোনে তাকে মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েত জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ না দিলে কোন পদক্ষেপ নিবে নেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
তিনি আরও জানান, কাউসার হোসেনের পরিবারের সদস্যরা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিডি প্রতিদিন/০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭/আরাফাত