সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মো. দুলাল মন্ডলের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের বালুকোল গ্রামে। স্ত্রী-দুই সন্তান ও স্ত্রীর গর্ভে ৮ মাস বয়সী সন্তান রেখে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে ঋণ ও ধার করে প্রায় ১০ মাস আগে পাড়ি জমায় সৌদি আরবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস শনিবার ভোরে সৌদি আরবের ডিজান প্রদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় দুলালসহ আরো ৯ বাংলাদেশি নিহত হন। শনিবার দুপুর একটার পর নিহত দুলাল সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের বালুকোল খরব পৌঁছার পর থেকেই চলছে শোকের মাতম। স্ত্রী স্বপ্না নাবালক তিন সন্তানকে নিয়ে বার বার কান্নায় মুর্ছা যাচ্ছেন। বয়োবৃদ্ধ বাবা আকবর মন্ডল ও মা হাজেরা বেগম শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। লাশ কবে আসবে তাও তারা জানেন না। ছেলের লাশ শেষবারের দেখতে এবং নিজ হাতে কবর দেয়ার জন্য দ্রুত লাশ ফেরত আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
নিহত দুলালের চাচা মোস্তফা জানান, ৫ ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে দুলাল তৃতীয় সন্তান। বড় দুই ভাই মারা গেছেন। ছোট এক ভাই দুর্ঘটনায় পঙ্গু। আরেক ভাই প্রতিবন্ধী। এ অবস্থায় পরিবারে আর্থিক অস্বচ্ছলতা দূর করতে দুলাল ধার-দেনা করে ১০ মাস ২২ দিন আগে সৌদি আরবে চলে যায়। সেখানে ডিজান প্রদেশের আল ফাহাদ কোম্পানির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেয়। শনিবার ভোরে কাজের যাবার সময় সৌদি আরবের একটি সেনাবাহিনীর গাড়ির ধাক্কায় তাদের বহনকারীটিকে খাদে পড়ে যায়। এতে দুলালসহ আরো ৯ জন মারা যান। শনিবার দুপুরে তার সহকর্মী বেলকুচির বাসিন্দা এক যুবক ফোন করে পরিবারকে বিষয়টি জানায়। এরপর থেকেই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়।
দুলালের বাবা আকবর মন্ডল জানান, দুলালের ঘরে সায়েম (৯) সাব্বির (৫) বায়েজিত (৫ মাস) নামে তিনটি নাবালক সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে দুলাল সৌদি আরবে যাবার সময় বায়েজিত মায়ের গর্ভে ছিল। শিশু বায়েজিত এখনো বাবার মুখ দেখেনি। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, আমার আরও দুই ছেলে স্টোক করে মারা গেছে। গতকাল আরেক ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেল। এ দুঃখ-বেদনা সহ্য করার মতো না। একজন পিতার কাছে ছেলে মৃত্যুর সংবাদ কত দুঃসহ তা বোঝাতে পারব না। ছেলেকে শেষ দেখা এবং নিজ হাতে যেন কবরে দাফন করতে পারেন এ জন্য ছেলে লাশ সৌদি আরব থেকে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে তিনি দাবি জানান।
মা হাজেরা বেগম জানান, ''পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছেলে দুলাল মারা গেল। এখনও ছেলের লাশ দেশে আসেনি। কবে-কখন আসবে তাও জানি না। প্রতিটি সময় খুব কষ্টে কাটছে। না জানি আমার বুকের মানিক কত নির্মমভাবে মারা গেছে। '' কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ''ছেলেটিকে যেন শেষ দেখতে পাই, এ ব্যবস্থা যেন সরকার করেন।'' তিনি বলেন, ছেলেটির তিনটি নাবালক শিশু রয়েছে। তাদেরও দেখার মতো কেউ রইল না। সরকার যদি অনাথ শিশুদের প্রতি একটু দয়া করে তাহলে খুব খুশি হতাম।
স্থানীয় বাসিন্দা সিকিম আলী জানান, দরিদ্র দুলাল ঋণ-ধার করে সৌদি আরবে গিয়েছিল। এখনও কারো ঋণ শোধ করতে পারেনি। তিনটি নাবালক ছেলে, স্ত্রী ও বাবা-মা রয়েছে। ছেলে তিনটির ভবিষ্যতের জন্য সরকার যদি একু সহায়তার হাত বাড়াতো, তবে খুব উপকার হতো।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন্নাহার সিদ্দিকা জানান, কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য পাবার পর লাশ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য সংশিষ্ট মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ জানুয়ারি, ২০১৭/মাহবুব