তীব্র শীত ও শৈত্যপ্রবাহে বাগেরহাটে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগবালাই। তীব্র শীতের কারণে বৃদ্ধা ও শিশুসহ প্রায় সব বয়েসী মানুষের মাঝে ঠান্ডাজনিত রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। গত তিনদিনে শুধু ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বাগেরহাট সদর হাসপাতাল ও শিশু ক্লিনিকসহ জেলা সদরের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছে প্রায় শতাধিক রোগী। যার মধ্যে রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক শিশু। এরা সবাই ঠান্ডাজনিত রোগ সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিৎকিসা নিচ্ছেন। সরোজমিনে বাগেরহাট সদর হাসপাতাল, শিশু ক্লিনিকসহ জেলা সদরের বিভিন্ন ক্লিনিক ঘুরে দেখা দেছে এসব চিত্র।
এদিকে শিশু বিশেষজ্ঞ চিৎকিসক না থাকায় বাগেরহাট সদর হাসপালে চিৎকিসা নিতে আসা ৩ মাস থেকে বিভিন্ন বসেয়ি শিশুর অভিভাবকরা পড়েছেন বিপাকে। চিৎকিসা নিতে আসা অনেক শিশুর পিতা-মাতাই প্রয়োজনীয় চিৎকিসা সেবা না পেয়ে তাদের শিশুদের বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করছেন। আর সদর হাসপাতালে শিশু রোগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় কর্তৃপক্ষ এসব শিশুদের চিকিৎসা দিতে পারছেন না। ঠান্ডাজনিত সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের মা-বাবারা চিৎকিসার জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ছুটে আসলেও প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অধিকাংশ অভিভাবকরা তাদের শিশুদের বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করেছেন। অনেকে আবার বাধ্য হয়ে সদর হাসপাতালে শিশুকে ভর্তি করেও চিকিৎসা পাচ্ছেনা।
শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা চার মাস বয়েসী ছেলে রহমতউল্লাহকে নিয়ে জেলার চিতলমারী উপজেলা কচুড়িয়া গ্রাম থেকে আসা কৃষক সিরাজুল মোল্লা বলেন, ঠান্ডা লেগে গত বুধবার ছেলেটির শ্বাসকষ্ট শুরু হলে বাগেরহাট সদর হাসপালে ভর্তি করি। এখানে কোন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ না থাকায় ঠিকমত চিৎকিসা সেবা পাচ্ছি না।
বাগেরহাট সদর উপজেলার কোন্ডলা গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক মো. আশরাফ হাওলাদার বলেন, ৩ মাস বয়েসী ছেলে নিউমনিয়ায় আক্রান্ত হলে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। এখানে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ না থাকায় উন্নত চিৎকিসার জন্য হাসপাতালে অন্য ডাক্তাররা তাকে বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করতে বলেছেন। টাকার অভাবে এখনো পর্যন্ত ভর্তি করতে পারেনি।
সদর হাসপাতালে চিৎকিসা নিতে আসা সুমি বেগমসহ একাধিক শিশুদের অভিভাবকরা বলেন, ঠান্ডা লাগায় আমারা বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে আসছি। সদর হাসপাতালে শিশু বিশেষষ্ণ চিকিৎসক নেই। আমরা বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাব। দরিদ্র মানুষ বাধ্য হয়ে বাহিরের ডাক্তারদের ৫০০ টাকা ভিজিট দিতে হচ্ছে।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক শেখ ইমরান মোহাম্মদ বলেন, শীতের কারণে শিশু ও বয়স্বকদের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের সাধ্যমত চিকিৎসা দেই। কিন্তু শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় অন্য হাসপাতালে রেফার করছি।
প্রাইভেট ক্লিনিকের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঠান্ডাজনিত কারণে শিশুদের হাসপাতালে সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই শিশুদের গরম কাপড়ের পাশাপাশি রুম গরম রাখার জন্য ইলেকট্রিক ব্লাব জ্বালিয়ে রাখতে হবে এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাগেরহাট সিভিল সার্জন ডা. অরুন চন্দ্র মন্ডল বলেন, বাগেরহাট সদর হাসপাতালে স্পেশাল কেয়ার ইউনিট চালু করা হয়েছে। ইউনিসেপের সহায়তায় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডটি শিশুদের সব ধরনের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত থাকলেও চিকিৎসক নেই। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উল্লেখ করে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করি শীঘ্রই শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাগেরহাট সদর হাসপাতালে আসবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার