নাটোর সদর এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বদলি আদেশের পরও অদৃশ্য খুঁটির জোরে স্বপদে বহাল রয়েছেন। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলে তাকে বদলি করা হয়। রীতিমত সরকারি আদেশ অমান্য করে তিনি যেমন নিজেও পদ ছাড়ছেন না, তেমনি ওই পদে সদ্য পদায়নকৃত কর্মকর্তাকেও যোগ দিতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২রা এপ্রিল) দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা থাকলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনি স্বপদেই বহাল রয়েছেন। এমনকি বদলির আদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে স্বপদে বহাল থাকতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাহায্যে খাদ্য অধিদপ্তরে জোর তদবির শুরু করেছেন এই কর্মকর্তা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অসজ্জিতভাবে খাদ্য মজুদ, খাদ্য সংরক্ষণে উদাসীনতা, দীর্ঘসময় নিজ কার্যালয়ে অনুপস্থিতিসহ গুদাম পরিচালনায় বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার একাধিক অভিযোগ রয়েছে সদর এলএসডি লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে। এর প্রেক্ষিতে জবাব চেয়ে একাধিকবার ওই কর্মকর্তাকে তলব করেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনির হোসেন। কোন সদুত্তর না দিয়ে বিষয়টি বারবার এড়িয়ে গেছেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে গত ০৭/০৩/১৮ তারিখে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য চিঠি দেয়া হয় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে।
চিঠিতে বলা হয়, গত বছরের ২২ অক্টোবর রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য পরিদর্শক নাটোর সদর এলএসডি পরিদর্শনে এলে এলএসডি লুৎফর রহমান কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। পরদিন ২৩ অক্টোবর (২৩/১০/১৭ তারিখে ২০৬৯ স্মারকে) কৈফিয়ত তলব করলে তিনি কোন উত্তর দেননি। কোন অনুমতি না নিয়ে পুনরায় তিনি চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারী কর্মস্থল ত্যাগ করেন এবং অনুমতি ছাড়া পরপর আরো ৫ দিন অনুপস্থিত থাকেন।
পুনরায় কৈফিয়ত তলব করা হলে তিনি ঢাকায় বাসা পরিবর্তনের অজুহাত দেন যা মন্ত্রণালয়ের কাছে অস্পষ্ট ও অসন্তোষজনক মনে হয়েছে। ওই সময়ে তিনি কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকেও ২০১৭-১৮ মৌসুমে ৮৫ দশমিক ৮৯০ মেট্রিক টন আমন ধানের সংগ্রহ মূল্য বাবদ ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭১০ টাকা পরিশোধের জন্য ৮টি ওজন মান মজুদ সনদ ইস্যু করেন তিনি। এ বিষয়েও কৈফিয়ত তলব করা হলে জবাবগুলো তার পূর্বোক্ত ঘটনার সাথে সাংঘর্ষিক ও মিথ্যা তথ্যে ভরপুর বলে তদন্ত কমিটির কাছে প্রমাণিত হয়েছে।
এমতাবস্থায় ২৮/০৩/১৮ তারিখ অভিযুক্ত লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদনানুযায়ী বিভাগীয় মামলা দায়েরের মাধ্যমে প্রশাসনিক ব্যবস্থাগ্রহণ ও তাকে এলএসডি হতে প্রত্যাহারের জন্য রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে নির্দেশ দেন অধিদপ্তরের প্রশাসন বিভাগের উপ-পরিচালক(তদন্ত ও মামলা) মামুন আল মোর্শেদ চৌধুরী।
পরদিন লুৎফর রহমানকে মুলাডলি এলএসডিতে বদলী করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একইসাথে তার স্থলে আবুল কালাম আজাদকে নতুন এলএসডির দায়িত্ব দেয়া হয়। গত ২রা এপ্রিল সোমবার আবুল কালাম আজাদের যোগদেয়ার কথা থাকলেও দায়িত্ব হস্তান্তর না করায় তিনি যোগ দিতে পারেননি।
এদিকে দায়িত্ব হস্তান্তরের বদলে এখনও স্বপদে থাকতে লুৎফর রহমান উচ্চমহলে তদবির করছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এজন্য তিনি ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিদায়ী সদর এলএসডি লুৎফর রহমান বলেন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না থাকাই মূলত তার বদলীর কারণ। বদলী সংক্রান্ত কোন চিঠি এখনও পাননি বলেই স্বপদে আছেন বলে জানান তিনি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম সদর এলএসডি লুৎফর রহমানের বদলী আদেশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। অফিসিয়ালি বদলীর ব্যাপারে তাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়নি, বিদায়ী এলএসডির এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি জানান, বদলী আদেশ চিঠি ও ফোনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। আর সুস্পষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে, ব্যক্তি সম্পর্কের কিছুই নেই এখানে। এখন অফিসিয়ালি লুৎফর রহমান স্বপদে বহাল থাকতে পারেন না। থাকলে তা বিধিসম্মত নয়।
এ ব্যাপারে রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য পরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, বদলী আদেশের পর স্বপদে থাকার সুযোগ নেই। দ্রুতই ওই কর্মকর্তার বদলী কার্যকর হবে। বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন তিনি।
বিডিপ্রতিদিন/ ই জাহান