শিকল নিয়ে খেলতো, শিকলে কামড় দিত। শিকল খোলার চেষ্টা করতো, না খুলতে পেরে সে নিজেই নিজেকে গালি গালাজ দিত, কখনো কখনো সে পরিবারের সদস্যদের সাথেও মন্দ আচরণ করতো। আজ সোমবার হঠাৎ করেই এই সব আচরণ সব বন্ধ হয়ে গেল। একেবারে ঠান্ডা মেজাজে থাকা হাসান আলীর হাতের ও পায়ের শিকল খুলে দেয়া হলো। মস্তিক বিকৃত হয়ে আট বছর শিকলে বন্দি থাকা হাসান আলীর (২৮) শিকল খুলে দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম জাকির হোসেন।
আজ সোমবার শিকলে বন্দি থাকা হাসানকে উদ্ধারের পর তার চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের উত্তরসাজাপুর (দিঘী মনগইত) গ্রামের আব্দুল আজিজ এর ছেলে হাসান আলী (২৮) প্রায় ১০ বছর পূর্বে স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করতো। সহায় সম্বলহীন আব্দুল আজিজ তার একমাত্র ছেলে হাসান কে বিয়েও দিয়েছিলেন। পিতা পুত্রের দৈনন্দিন আয়ে তাদের সংসার ভালো ভাবে চলতে থাকে। এরই মাঝে হাসান আলীর ঘরে একটি কন্যা সন্তান (৯) জন্ম নেয়। এক দিন হাসান আলী গ্রাম থেকে পিকনিকে যায়। পিকনিক থেকে ফেরার পথে সে গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এরপর থেকেই সে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। প্রায় বিকৃত আচরণও তার মধ্যে দেখা দেয়। পরিবারেরসহ প্রতিবেশীদের উপরে কারণে অকারণে মারপিটসহ বাড়ির জিনিসপত্রের ক্ষতিসাধন করতে থাকে। দরিদ্র পিতা আব্দুল আজিজ তার একমাত্র পুত্রকে সুস্থ করতে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করান। কিন্তু তাতে কোন উন্নতি না হওয়ায় তার অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে প্রায় ৮ বছর যাবত তার পায়ে শিকল বেঁধে বন্দী করে রাখেন।
বিষয়টি জানতে পেরে সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম জাকির হোসেন, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সালেহ মোহাম্মদ নূহসহ আব্দুল আজিজের বাড়িতে যায়। হাসান আলীর বাবা মার কাছে থেকে বিস্তারিত জেনে এবং তার পায়ের শিকল খুলে দেন এবং তাকে সরকারি খরচেই উন্নত চিকিৎসার আশ্বাস দেন। পরে তাৎক্ষনিকভাবে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন।
হাসান আলীর পিতা আব্দুল আজিজ কান্না জড়িতকণ্ঠে বলেন, তার তেমন কোন আয় নেই। তাই ভাল চিকিৎসা করাতে পারেন নি। এই সরকার আমার ছেলের চিকিৎসা করাবে। ছেলেকে শিকলমুক্ত করে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছে। তিনি জানান, ছেলে হাসান আলীর স্ত্রী চলে গেছে। তার ৯ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম জাকির হোসেন জানান, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে হাসান আলীকে। ভালো চিকিৎসায় যদি সে সুস্থ্য হয়ে উঠেন তাহলে একটি পরিবার বাঁচবে। তার আয়ে সে বৃদ্ধ মা, বাবা ও কন্যাকে দেখভাল করতে পারবে। দেশের জন্য সে বোঝা না হয়ে বরং সে অনুকরনীয় হয়ে উঠতে পারে। আমরা শুধু সরকারি যে সহযোগিতা রয়েছে সেটি দেয়ার চেষ্টা করছি। তাকে প্রতিবন্ধী তালিকায় নিয়ে একটি ঘর করে দেয়া হবে। তাদের জমি থাকলেও ঘর নেই। সে পুরো সুস্থ্য হলে তাকে আয় বর্ধনমূলক কাজও দেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার