ঠাকুরগাঁওয়ে ইজিবাইকে (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা) বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদাবাজরা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও স্ট্যান্ড সমিতির নামে জেলার ১০টি জায়গায় লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে চাঁদা আদায় করছে।
ইজিবাইকের চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদে গত বছর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেয় অটো শ্রমিক অধিকার আন্দোলন নামের একটি সংগঠন। কিন্তু এখন পর্যন্ত চাঁদা বন্ধের কোন উদ্যাগ গ্রহণ করেনি প্রশাসন।
শহরের কলেজপাড়া এলাকার ইজিবাইকের চালক ফারুক হোসেন বলেন, জেলার ১০টি জায়গায় ইজিবাইকের চালকদের কাছ থেকে ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, সমিতির নামে চাঁদা আদায় করা হলেও প্রয়োজনে তাদের পাওয়া যায় না।
ছয়টি জায়গা ঘুরে ইজিবাইকের চালকের এই বক্তব্যের প্রমাণ মিলেছে। জেলার সদর উপজেলার ঠাকুরগাঁও রোড, ভুল্লি, রুহিয়া, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চৌরাস্তা, রানীশংকৈলের নেকমরদ, শীবদিঘি, পীরগঞ্জের লোহাগাড়া ঘুরে ইজিবাইক থেকে চাঁদা আদায়ের দৃশ্য দেখা গেছে। চাঁদা নিয়ে আদায়কারীদের কোনো রাখঢাক নেই। সব হচ্ছে প্রকাশ্যে। ইজিবাইক আসতে দেখলেই চাঁদা আদায়কারীরা লাঠি দিয়ে তা থামানোর চেষ্টা করে। অধিকাংশ চালক ঝামেলা এড়াতে চাঁদা দিয়ে চলে যান।
এই টাকা দিয়ে কী হয়, কোথায় যায়? জানতে চাইলে ইজিবাইকের চালক মোহাম্মদ লাবু বলেন, ‘কোথায় যায়, আমরা জানি না।’
ঠাকুরগাঁও রোড এলাকার আরেক ইজিবাইকের চালক মো. শহাজাহান আলী বলেন, ‘এক স্ট্যান্ডে চাঁদা দিয়ে অন্য স্ট্যান্ডে গেলে সেখানেও আমাদের চাঁদা দিতে হয়। এভাবে একজন চালককে প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়।’ সদর উপজেলার ভুল্লি এলাকার চালক রহমত আলী, নেকমরদ এলাকার চালক মোহাম্মদ আলী একই রকম কথা বলেন।
আটো শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের উপদেষ্টা মাহবুব আলম বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় কমপক্ষে ১৮ হাজার ইজিবাইক চলাচল করে। এসব ইজিবাইকের মধ্যে প্রতিদিন অন্তত নয় হাজার ইজিবাইকের চালককে চাঁদাবাজদের হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রতিটি ইজিবাইকের চালককে প্রতিদিন ন্যূনতম চাঁদা দিতে হয় ১০ টাকা করে। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে ৯০ হাজার টাকা।
আর প্রতি মাসে ইজিবাইক থেকে আদায় করা হয় অন্তত ২৭ লাখ টাকা। এ হিসাবে বছরে জেলার ইজিবাইকের চালকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া ইজিবাইক মালিক সমিতি বিভিন্ন উৎসবে, স্ট্যান্ড সমিতি চেইনের নামে বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা আদায় করে।
এ বিষয়ে জেলা ইজিবাইক মালিক ও শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ইজিবাইক মালিক সমিতি জেলার কোথাও চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে না। মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন এ চাঁদা আদায় করছে।
জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জব্বার বলেন, ‘ইজিবাইক থেকে মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন চাঁদা আদায় করছে, এ খবর আমার জানা নেই।’
ঠাকুরগাঁও থানার ওসি মোস্তাফিজুর বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি।
সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে ইজিবাইকের চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় বন্ধ, ইজিবাইক নবায়ন ফি ৩০০ টাকা নির্ধারণ করার দাবিতে অটো শ্রমিক অধিকার আন্দোলন শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে সংগঠনটি জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. ড. কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ইজি বাইকের দাপটে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। যা ইতোমধ্যে আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। পূর্বে স্মারকলিপিটি দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যানযট মুক্ত নগরীর গড়তে সকলের সহযোগিতার আহবান জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল