আরশিনগর। আরশি অর্থ আয়না বা দর্পণ এবং নগর অর্থ শহর। লালনের দৃষ্টিতে হৃদয় ভূবন। সেই আধ্যাত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই নরসিংদীর প্রয়াত এমপি সামসুদ্দিন আহমেদ এছাক শহরবাসীর মনের প্রশান্তির জন্য গড়ে তোলেন বিনোদন কেন্দ্র ‘আরশিনগর’।
কিন্তু বিনোদন কেন্দ্রটি বিভিন্ন বয়সের মানুষের মনে প্রশান্তি ছড়ালেও তার পাশের প্রধান সড়কটি বর্তমানে শহরবাসীর জন্য যন্ত্রণাদায়ক স্থানে পরিণত হয়েছে। কারণ প্রধান সড়কটির আরশিনগর লেভেল ক্রসিংয়ের যানজট এখন শহরবাসীর গলার ফাঁস।
নরসিংদী শহরের মাঝ দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ যাওয়ায় উত্তর ও দক্ষিণ বিভক্ত হয়েছে শহর। একদিকে রয়েছে জেলা প্রশাসন ও নরসিংদী সরকারি কলেজসহ সব সরকারি অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ; অন্যদিকে পৌরসভা, বাজার, বাসস্ট্যান্ডসহ আবাসিক এলাকা। এসব এলাকায় যাতায়াতের জন্য পাঁচটি সড়ক থাকলেও বাসাইল ও আরশিনগরে রয়েছে লেভেলক্রসিং। বাসাইল ক্রসিং দিয়ে সাহেপ্রতাব, সাটিরপাড়া হয়ে পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে শহরে প্রবেশ করতে হয়। বিকল্প সড়ক না থাকায় বেশিরভাগ শহরবাসী শুধু আরশিনগর লেভেলক্রসিং দিয়েই যাতায়াত করে। এতে প্রতিদিন এখানে যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে শহরে ব্যাপক হারে বেড়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। পৌরসভার দেওয়া তথ্য মতে, নরসিংদী শহরে নিবন্ধিত অটোরিকশা রয়েছে দুই হাজার ২০০। এর বাইরেও অনিবন্ধিত অটোরিকশা রয়েছে আরও তিন হাজার। সঙ্গে রয়েছে রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে আরশিনগর লেভেলক্রসিংয়ের যানজট।
আজ শুক্রবার দুপুরে আরশিনগরে গিয়ে দেখা যায়, বেলা ১টা ২০ মিনিটে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য গেটের বেড়িয়া ফেলা হয়। এরই মধ্যে দুই পাশে অসংখ্য অটোরিক্সা, রিক্সা, ভ্যান, প্রাইভেটকার আটকা পড়ে। ১০ মিনিট পর ট্রেন চলে যাওয়ার পর বেড়িয়া খুলে দেয়া হয়। দুই পাশের গাড়ি পাড়াপাড়ের আগেই ৩ মিনিট পর পুনরায় ট্রেনের জন্য গেইটের বেড়িয়া ফেলা হয়। ফলে অনেকগুলো অটোরিক্সা ও রিক্সা রেল লাইনে আটকা পড়ে। পড়ে তাদেরকে দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়। ট্রেনটি চলে যাওয়ার ১০ মিনিট পর স্বাভাবিক হয় যানবাহন চলাচল।
নরসিংদী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী স্বর্ণা রহমান ও ফয়সাল হোসেন বলেন, আরশিনগর মানেই যানজটের ভোগান্তি। যানজটের কারণে প্রতিবার আমাদের ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় নষ্ট হয়।
নরসিংদীর রাঙ্গামাটি এলাকার গৃহবধূ সুইটি বেগম বলেন, প্রতিদিন সন্তানদের স্কুলে আনা-নেওয়ায় যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়। একটা কিছু করে আমাদেরকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেন।
নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক কালাম মাহমূদ বলেন, আরশিনগর শব্দটির অর্থ আধ্যত্বিক হলেও প্রশান্তিমূলক। কিন্তু লেভেল ক্রসিংয়ের যানজটের কারণে নরসিংদীবাসীর নিকট আরশিনগর শব্দটি পীড়াদায়ক শব্দে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চায়।
আরশিনগর লেভেল ক্রসিংয়ের গেইটম্যান আমিনুল হক বলেন, দৈনিক পূর্বাঞ্চলীয় জোনের মেইল, আন্তঃনগর ও কনটেইনারবাহী ৫৩টি ট্রেন যাওয়া আসা করে। প্রতিবার ট্রেনের জন্য পাঁচ থেকে আট মিনিট ক্রসিং বন্ধ থাকে।
এদিকে জনদুর্ভোগ লাগবের জন্য নরসিংদী পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল লেভেলক্রসিংয়ের ১০০ মিটার দূরে রেলওয়ে কালভার্টের নিচ দিয়ে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে।
নরসিংদী পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম বলেন, আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে আন্ডারপাসটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। আন্ডারপাস দিয়ে ছোট যানবাহনগুলো চলাচল করতে পারবে। এতে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ যানজট কমে যাবে বলে আমাদের ধারণা।
রেলওয়ে নরসিংদীর উর্ধ্বতন উপ সহকারী প্রকৌশলী (পথ) আনোয়ার হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথকে ডুয়েল গেইজে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ওই প্রকল্পে আরশীনগরের যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রস্তাবনা রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা