দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত। আর ক’দিন পরেই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আর এ তিন দিবসগুলোর বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলের রাজ্য খ্যাত যশোরের গদখালি ও শার্শা এলাকার ফুলচাষীরা।
২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে আমরা ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে ১৩ই ফ্রেরুয়ারি বসন্ত বরণ ও ১৪ ফ্রেরুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবস এই দু’দিনে ফুল বিক্রি বিক্রি বেড়ে যায় ফুলচাষীদের। এ সময়কে কেন্দ্র করে এখানকার ফুল ব্যবসায়ীদেরও থাকে বিশেষ প্রস্তুতি। ফুল ব্যবসায়ীদের কাছে পুরো ফ্রেরুয়ারি মাসটি উৎসব হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য মতে, এবার যশোরে পাইকারি পর্যায়ে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যশোরে প্রায় ৬ হাজার ফুল চাষী ১৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত। তার ভিতর সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গ্যালোরিয়াস শতকরা ৪০% চাষ করে এখানকার ফুল চাষীরা। তারপরই ২০% চাষ হয় রজনীগন্ধা। গোলাপ ১৫% চাষ হয়। তাদের উৎপাদিত জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল সারাদেশের মানুষের মন রাঙাচ্ছে এখানকার চাষীরা।
সরেজমিনে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলা শার্শার উলাশী এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, জমিতে সেচ প্রদান, গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরানো, সার-কীটনাশক, আগাছা পরিষ্কার করাসহ ফুলের আনুষাঙ্গিক পরিচর্যা করছেন চাষীরা। তাদের লক্ষ এ মাসের প্রতিটা ফুলের বাজার ধরা।
শার্শার উলাশীর ফুল চাষী দিলদার হোসেন জানান, ফুল চাষে আসা বংশপরম্পরায়। আমার বাবা ফুল চাষ করতো। এখন আমিও ফুল চাষের সাথে সংপৃক্ত। আমি ৩ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছি। তার মধ্যে রজনীগন্ধা ১ , গোলাপ ১ বিঘা ও জারবেরা ১ বিঘায়। সামনে ফুলের বড় বাজার তাইতো বাজার ধরতে সকাল-বিকাল ফুলের পরিচর্যা করছি।
গদখালিতে কথা হয় তরুণ ফুল ফুলচাষী আশরাফুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন, ৪ বিঘা গোলাপ, ২ বিঘা জারবেরা ও ১ বিঘা গ্যালোরিয়াস ও রডস্টিক চাষ করেছেন। আমরা গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুল একটু দেরি করে ফোটে। বসন্ত দিবস, ভালবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে যাতে ফুল বাজারে দেওয়া যায়। প্রতিটি গোলাপে ক্যাপ পরানোসহ খরচ প্রায় ৪ টাকার মতো। যদি ৭-৮ টাকা বিক্রি করা যায় তাহলে মুনাফা বেশি পাবো বলে আশাবাদ। ফুল চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি সফল ভাবে ফুল চাষ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, যশোরের ঝিকরগাছা, শার্শা উপজেলারসহ এ জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু হয়। এখন চাষ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। দেশে ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী ও শার্শা থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এই ফুল এখন যাচ্ছে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াতেও। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবিকা এই চাষ বা ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফুলচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে কেবল যশোরেই প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষী রয়েছেন। সামনের দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে প্রায় ৭০ কোটি ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারাবছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও মূলত ফ্রেরুয়ারি মাসের উৎসবকে সামনে রেখেই জোরেশোরে এখানকার চাষীরা ফুল চাষ করে থাকেন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা