৬০০ টাকার স্থলে স্বামী-স্ত্রী'র ভাড়া বাবদ মাত্র ৫০ টাকা কম দিতে চেয়েছিলেন আলম এশিয়ার বাসে চড়া সালাহ উদ্দীন দম্পতি। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বাসের হেলপার। চলন্ত বাসেই নাজেহাল করে ওই দম্পতিকে। সালাহ উদ্দীন নিজেকে চালক পরিচয় দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত গাজীপুরের বাঘের বাজারে চালকের সহকারী লাথি দিয়ে ফেলে দেয় তাকে। পরে বাসের চাকায় পিষ্ট করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চালক। হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি পিশাচ ওই চালক। নিহত সালাহ উদ্দিনের স্ত্রীকে বাসে নিয়েই ছুটে চলে চালক। পরে তাকেও হত্যার হুমকি দেয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে আরো পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাস থামিয়ে সটকে পড়ে বাসের চালক ও সহযোগীরা।
নিহত সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী পারুল আক্তার ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা এ তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন। এদিকে এ ঘটনায় নিহতের শ্বশুর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পরিবার ও এলাকাবাসী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার সকালে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার শীলপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা মেলে শোকে স্তব্দ নিহত সালাহ উদ্দিনের শাশুড়ি। খরিয়া নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা ছায়া সুনিবিড় শান্ত গ্রামটিতে যেন বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের বুক ফাটা কান্না আর আহাজারিতে ভারী এখন শীলপুরের বাতাস। ঘড়ির কাটায় যখন সকাল সাড়ে ১০টা তখন গাজীপুর থেকে নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছেন নিহতের স্ত্রী। ক্ষণে ক্ষণে মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। বিলাপ করে বলছিলেন স্বামীর সাথে তার বিভিন্ন স্মৃতি কথা। বারবার বিচার চাইছেন স্বামীর ঘাতকদের। পারুল আক্তারের এ শোক এখন চারদিকে সবুজে ঘেরা ছোট্ট পাড়া-গাঁয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
পারুলের বড় ভাই আবুল কাশেম জানান, ‘আমার ভগ্নিপতির কোনো বাড়িঘর নেই। কিছুদিন আগে আমাদের বাড়ির পাশে একটা জায়গা দেখায়া কইছিল মরার পর এইখানে দাফন করার লাইজ্ঞা। অহন এইডাই হইলো। আমার বইন অহন কি নিয়া থাকবো?’
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত যাত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদ ঢাকার আলু বাজারের মৃত শাহান উদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। স্থানীয় একটি কারখানায় গাড়ি চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রায় ১৮ বছর আগে এ গ্রামে বিয়ে করেন সালাহ উদ্দীন।
গত রবিবার ঈদের ছুটি শেষে আলম এশিয়া পরিবহনে স্ত্রীকে নিয়ে সেখানেই ফিরছিলেন। পরে ওই এলাকাতেই বাস থেকে লাথি মেরে ফেলে দেয় হেলপার। এর পরপরই বাসের চাকায় পিষ্ট করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চালক।
বিডি-প্রতিদিন/১০ জুন, ২০১৯/মাহবুব