১৫ জুন, ২০১৯ ২০:৪১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাস্তা পানিতে ভেসে দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাস্তা পানিতে ভেসে দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলায় নির্মাণাধীন সেতুর পাশের মাটির বিকল্প রাস্তা ভারতীয় পাহাড়ি পানির তোড়ে ভেসে গেছে। এতে দুভোর্গ পড়েছেন উপজেলার চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। বাঁশের তৈরি অস্থায়ী সাঁকোই এখন একমাত্র ভরসা। সেটিও নড়বড়ে। 

উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের আউলিয়া বাজারের দক্ষিণ দিকের গজারিয়া খালের উপর পুরনো সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয়। মেসার্স লোকমান ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গজারিয়া খালের উপর ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের কাজটি পান। গত দুই মাস আগে খালের উপর থাকা পুরনো সেতুটি ভাঙার কাজ শুরু করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সপ্তাহ খানে আগে পুরনো সেতু ভাঙার কাজ শেষ হয়। পুরনো সেতু ভেঙে ফেলায় মানুষের চলাচলের জন্য সেতুর পূর্বদিকে মাটির বিকল্প একটি রাস্তা তৈরি করা হয়। 

উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়পুর ভারত সীমান্ত ঘেঁষা এলাকা। গত ২ জুন সকাল থেকে উপজেলায় বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল থেকেই বৃষ্টি সঙ্গে ভারতীয় পাহাড়ি পানির ঢল নামে। ২ জুন দিনভর পাহাড়ি পানি আসা অব্যাহত থাকে। পাহাড়ি পানির বেগ বেশি থাকায় গত ৩ জুন ভোর সকালে মাটির বিকল্প রাস্তটি ভেঙে পানিতে ভেসে যায়। গত ২ ও ৩ জুন ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ নিজ উদ্যোগে বাঁশের একটি অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করেছেন। উপজেলাল স্কুল পড়ুয়া স্কাউট সদস্যরা সাঁকো তৈরির কাজে সহযোগিতা করেছে। 

জানা গেছে, আউলিয়া বাজারের এই রাস্তা ব্যবহার করে উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের উত্তর দিকে পাহাড়পুর কচুয়ামোড়া, খাটিঙ্গা, ধুরানাল, অলিপুর, সহদেবপুর গ্রামের প্রায় ১৪ হাজার এবং দক্ষিণদিকে সেজামোড়া, কামালমোড়া, পশ্চিম সেজামোড়া, গোয়ালনগর, রোপা, কালাছড়া গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ চলাচল করে। এছাড়াও উপজেলার হরষপুর, পাহাড়পুর, বিষ্ণুপর ও সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষও এই রাস্তা ব্যবহার করে। উপজেলার মুকুন্দপুর রেলওয়ে স্টেশনও পাহাড়পুর ইউনিয়নে অবস্থিত। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং জেলা শহর থেকে ট্রেনে মুকুন্দপুর রেলস্টেশনে নেমে এই আউলিয়া বাজারের এই রাস্তা মানুষকে ব্যবহার করতে হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুর পূর্বদিকে রাস্তাটির প্রায় ২০-২৫ ফুট ভেঙে ভেসে গিয়ে সেখানে প্রায় ৪-৫ ফুট গভীরতা সৃষ্টি হয়েছে। এক সঙ্গে বেশি মানুষ উঠলে বাঁশের তৈরি সাঁকো কাঁপতে শুরু করে। দুই পাশের সাঁকোর নিচের মাটিও সরতে শুরু করেছে। যে কোনো মুহূর্তে সাঁকোটি ভেঙে যেতে পারে। 

স্থানীয়রা জানায়, রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে চলাচল করতে ভয় লাগে। সাঁকোর যে অবস্থা উঠলেই মনে হয় এই ভেঙে যাবে। সাঁকোতে উঠে আল্লাহ আল্লাহ জবতে থাকি। চলাচলে সময় ও খরচ দুটোই বেশি লাগছে। 

পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, মানুষের চলাচলের জন্য মাটির বিকল্প রাস্তাটি পাহাড়ি পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এতে পাহাড়পুর ইউনিয়নের ১০-১২টি গ্রামসহ উপজেলার চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

বিজয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষে সেখানে বেইলি সেতুর নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে খুব শিগগির একটা বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঠিকাদার লোকমান হোসেন বলেন, শ্রমিকদের বাড়ি চট্টগ্রামের চকরিয়ায়। তারা ঈদের ছুটিতে বাড়ি চলে গেছে। 

বিডি-প্রতিদিন/১৫ জুন, ২০১৯/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর