পাবনায় দলবেধে গৃহবধূকে ধর্ষণের থানায় তাদের একজনের সাথে বিয়ের পর মামলার ঘটনার অন্যতম আসামি দাপুনিয়া ইউপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ঘন্টুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার বেলা ১১টায় ঈশ্বরদীর মুলাডুলি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান এই তথ্য নিশ্চিত করেন। গ্রেফতারকৃত ঘন্টু সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের দড়িকামালপুর সিরাজ মাস্টারের ছেলে। এ নিয়ে এই মামলায় অভিযুক্ত ৫ আসামির দুইজনকে গ্রেফতার করা হলো।
সম্প্রতি ধর্ষণের মামলা না নিয়ে মীমাংসা করতে অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে গৃহবধূকে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সদর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে জেলা পুলিশ তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে ধর্ষণ মামলা নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেয় এবং পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবাইদুল হক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক ইকরামুল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে।
পাবনা পুলিশ সুপারের নির্দেশে ৯ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশ ৫ জনকে আসামি করে মামলাটি নথিভুক্ত করে এবং ধর্ষণের অভিযোগে রাসেলকে গ্রেফতার করে। পরে বুধবার সকালে ঘটনার মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত শরিফুল ইসলামকে ঘন্টুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে মঙ্গলবার রাতে ডাক্তারী পরীক্ষা শেষে পরিবারের কাছে নির্যাতিতা গৃহবধূকে হস্তান্তর করে পুলিশ।
তবে ঘন্টু স্থানীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদে থাকলেও তার অপকর্মের দায় দল নেবে না বলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর খান বলেন, ঘন্টু আমার কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। তিনি সভাপতি এবং আমার কোন কথা শুনেন না। তিনি তার মতো করে চলাফেরা করেন। আমরা বলেও তাকে সংশোধন করতে পারি নাই। কারোর ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় দল বহন করবে না বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, শরিফুল ইসলাম ঘন্টু গত ৪/৫ বছর পূর্বে সৌদি আরব থেকে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। অল্প দিনের মধ্যেই নিজস্ব বাহিনী তৈরী করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেন। তার ত্রাসের রাজত্বে ওই এলাকায় ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
সরেজমিনে ওই এলাকায় ঘুরে ঘন্টু বাহিনীর অপকর্মের সত্যতাও মিলেছে। তবে ভয়ে নাম প্রকাশ করে কেউ বক্তব্য না দিলেও ওসি ওবাইদুল হকের সাথে ঘন্টুর বিশেষ সম্পর্কেল বিষয়টি এলাকায় ওপেন সিক্রেট বলেই মন্তব্য করেন স্থানীয়রা। তারা জানান, ঘন্টু বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, সালিশী বাণিজ্য করলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। সর্বশেষ ধর্ষণ মামলা থেকে ঘন্টুকে বাঁচাতেই ওসি ওবাইদুল হক থানায় এই বিয়ের নাটক সাজান।
এ ঘটনার পর গত মঙ্গলবার পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে ধর্ষণের আলামত ও থানায় বিয়ে দেওয়ার কাগজপত্র জব্দ করেন। একই সময়ে ধর্ষণের ঘটনাস্থল ঘন্টুর ব্যক্তিগত অফিস অপরাধস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে ক্রাইম সিন ফিতা দিয়ে ঘিরে দেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলে ও আলামত দেখে দলবদ্ধ ধর্ষণের সত্যতা মিলেছে। ওসির নিকট থেকে শোকজ নোটিশের জবাব পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলার অন্য আসামীদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আসামীরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, এই ঘটনায় কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
এদিকে থানায় বিয়ের বিষয়টি ওসি ওবাইদুল হক অস্বীকার করলেও পুলিশী তদন্তে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার রাতে বিয়ের কাবিনামাসহ সমস্ত কাগজপত্র জব্দ করেছে পুলিশ।
এই বিয়ের কাজী মাওলানা ফজলুল হক আজম বলেন, যদিও বিবাহিত নারীকে তাৎক্ষণিকভাবে তালাকের পর বিয়ে দেওয়ার কোন বিধি বিধান নেই, তবুও ওসি ওবাইদুল হকের চাপে আমার এলাকার বাইরে গিয়ে বিয়ের কাজটি সম্পন্ন করতে হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ কথিত ওই বিয়ের প্রমানক কাগজপত্রাদি জব্দ করেছেন। তবে এই অনিচ্ছাকৃত কাজের জন্যে কাজী অনুতপ্ত বলেও জানান।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ আগস্ট রাতে পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের যশোদল সাহাপুর গ্রামের তিন সন্তানের জননী এক গৃহবধূকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে রাসেল, ঘন্টু, ওসমান, হোসেন ও সঞ্জু নামের ৫ যুবক আটকে রেখে টানা ৪ দিন ধরে ধর্ষণ করে।
পরে গত ৫ সেপ্টেম্বর তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ওই গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত না করে অভিযুক্ত এক ধর্ষক রাসেলের সাথে থানা চত্বরে বিয়ে দিয়ে ঘটনাটির নিষ্পত্তির চেষ্টা করেন ওসি। এ সংবাদ গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা