২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৩:৩৩

‘কোমর তাঁতে পাহাড়ি নারীর কর্মসংস্থান’

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

‘কোমর তাঁতে পাহাড়ি নারীর কর্মসংস্থান’

পার্বত্যাঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা কোমর তাঁতে গড়ে তুলেছে কর্মসংস্থান। ঘরে বসে প্রসারিত করেছে নিজেদের বস্ত্রশিল্প ব্যবসা। হাট-বাজার আর মার্কেটগুলোতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এসব বস্ত্র। যা সবার কাছে ‘‘পিনন হাদি’’ নামে বেশ পরিচিত। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের কোমর তাঁতে তৈরি এসব বস্ত্রশিল্প পাহাড়ের গণ্ডি পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এসব বস্ত্রের প্রতি আকর্ষণ পর্যটকদের বেশি। চাহিদা অনেক। লাভও বেশি। তাই এ শিল্পের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে পাহাড়ি নারীদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের প্রধান পোশাক হচ্ছে ‘পিনন হাদি’। রেশমি সুতাই তৈরি এসব পিনন হাদি দেখতে খুব আকর্ষণীয়। তাই শুধু পাহাড়ি নারী নয়, বাঙালী নারীরাও শখের বসে পরিধান করে থাকে এ বিশেষ বস্ত্র। তাই বাণিজ্যকভাবে প্রসারিত হতে বেশি সময় লাগেনি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের কোমর তাঁতে তৈরি পিনন হাদি।

রাঙামাটি সদর উপজেলার সাবেক জনপ্রতিনিধি পলাশ কুসুম চাকমা জানান, রাঙামাটির রাঙাপনির এলাকার ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে এমন কোমর তাঁতের বস্ত্র শিল্প। এছাড়া রাঙামাটির প্রায় পাহাড়ি পল্লীতেও নারীরা এ কাজে নিয়োজিত। অবসর সময়ে কোমর তাঁতে তৈরি করেন নানা ধরনের বস্ত্র। তবে এ কাজ বেশ কঠিন হলেও বাণিজীকভাবে তারা সুফল পাচ্ছেন।

কথা হয় রাঙাপানি এলাকার কোমর তাঁতের বস্ত্র শিল্পী রঞ্জনা চাকমা ও বেলপুদি চাকমার সাথে। তারা বলেছেন, এক জোড়া পিনন হাদি তৈরি করতে প্রায় ১৫ দিন সময় লাগে। কারণ এ কাজ পুরোপুরি হাতের উপর। কোন মেশিনের মাধ্যমে করা হয় না। তাই সময় একটু বেশি লাগে। এ বস্ত্র তৈরি করতে প্রথমে রদং করতে হয়। অর্থাৎ বাশেঁ গায়ে ছিদ্র করা লাগে। ছিদ্রের সাথে ছোট ছোট বাঁশের কনছি বসিয়ে মিলিয়ে নিতে হয়। চরকিতে প্রস্তুত রাখা সুতা গাঁথা হয় সেখানে। পরে বেইন আর্থাৎ কোমর তাঁত টানা হয়। নকশা অনুযায়ি বাজার থেকে কিনে আনতে হয় হরেক রঙের রেশমি সুতা। সে সুতা দিয়ে তৈরি করা হয় পিনন হাদি।

এ ব্যাপারে আরও জানান কোমর তাঁতি প্রত্যমেলা চাকমা ও শ্যামলি চাকমা। তারা বলেছেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে চাকমা নারীরা যেটা উপরে উড়নারমত পরিধান করেন সেটাকে বুক কাপড়। আর যেটা নিচে পরিদান করে সেটা থামি বলে। অর্থাৎ চাকমা ভাষায় এটাকে এক কথায় পিনন হাদি বলে। এ পিনন হাদির বাজারে অনেক চাহিদা রয়েছে। এক জোড়া রেশমি সুতার তৈরি পিনন-হাদি ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। তবে সুতিরগুলো হাজার ১২শ টাকায় বিক্রি করা হয়। তাই কষ্টের তুলনায় লাভ অনেক।

অন্যদিকে পিনন-হাদি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারিভাবে ঋণের সহযোগিতা পাওয়া গেলে এ ব্যবসা আরও ব্যাপকভাবে জমে উঠতো। কারণ অনেকে সুতা কেনার অভাবে শিল্পীরা কাপড় তৈরি করতে পারে না। এ ক্ষুদ্র শিল্পকে কাজে লাগানো গেলে পাহাড়ের বাসিন্দারা অর্থনৈতিকভাবে আরও অগ্রসর হবে।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর