দুই দিনের টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় নওগাঁর বিভিন্ন অঞ্চলের নিচু জমির ফসলের খেতে পানি জমে গেছে এবং সবজি ও আমন ধান মাটিতে নুয়ে গেছে। আরও কিছু দিন এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে খেতের শাকসবজি ও আমন ধানের বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
জেলার বদলগাছী আবাহওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নওগাঁয় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। শুক্রবারও সারাদিন কখনও ঝিরিঝিরি, কখনও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আজ শনিবার সকাল থেকে আকাশ ভালো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা থেকে আজ শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত নওগাঁয় মোট বৃষ্টিপাত হয়েছে ২১ মিলিমিটার। বৃষ্টির কারণে কমেছে তাপমাত্রা। গত বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেটা কমে বৃহস্পতিবার ছিল ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ শনিবার সকাল ৯টায় ছিল ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বদলগাছী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক হামিদুল ইসলাম বলেন, আগামী দুই-তিন দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। চাষিরা চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শীতকালীন সবজির চারা রোপন ও বীজ বপন শুরু করেছেন। এছাড়া খরিপ-১ মৌসুমের শেষের দিকে শীতের আগাম সবজি চাষ হয়েছে ৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। এসব আগাম সবজি ইতোমধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। জেলায় এ বছর রোপা আমন ধান চাষ হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ২৭৯ হেক্টর জমিতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নওগাঁর সদর উপজেলার হাঁপানিয়া, বর্ষাইল, বক্তারপুর, পাহাড়পুর, মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ও ভীমপুর এলাকার ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, করলা, ঢেড়স, মুলা, পালংশাক, লাউ, মিষ্টিকুমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজির খেতে পানি জমে গেছে। কৃষকদের খেত থেকে সেচ দিয়ে পানি সরানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে। রোপা আমনের ধান গাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে।
বক্তারপুর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের কৃষক খবির উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, জুয়েলসহ ১০-১২ জন কৃষক জানান, গত সেপ্টম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে টানা দুই-তিন ধরে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তখন খেতে শীতের আগাম সবজির ফলন আসা শুরু করেছিল। ওই বৃষ্টিতে শীতের আগাম সবজি ক্ষতির মুখে পড়ে। আবার কৃষকেরা যখন ব্যাপকহারে শীতকালীন সবজির চারা রোপন ও বপন করতে শুরু করেছে, তখন আবার বৃষ্টিপাত শুরু হলো। এতে সদ্য লাগানো সবজির চারা ও বপন করা বীজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ঝড়ো হাওয়ার কারণে আমন ধান মাটিতে শুয়ে পড়ায় ফলন কম হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
সদর উপজেলার জাগেস্বর গ্রামের কৃষক নিপেন সরকার বলেন, তিনি এ বছর বেশি লাভের আশায় দেড় বিঘা জমিতে শীতের আগাম সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেন। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষে দুই-দিনের বৃষ্টিতে তাঁর খেতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গাছ নষ্ট হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার থেকে দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে তাঁর কপি খেত পানি জমে আরেক নষ্ট হতে বসেছে।
পাহাড়পুর এলাকার একটি মাঠে থালা দিয়ে সেচ দিয়ে মরিচ খেত থেকে পানি সরানোর কাজ করছিলেন কৃষক আলেফ মন্ডল। তিনি বলেন, 'পানি জমে মরিচের গাছগুলা মরতে বসেছে। তাই স্যাচ দিয়া পানি সরানোর চেষ্টা করিচ্ছি। কিন্তু সেচ দিয়েও কোনো কাম হচ্ছে না। বৃষ্টিই তো সারিচ্ছে না। এভাবে আর দুই তিন-দিন বৃষ্টি হলে মরিচের সব গাছ পচে নষ্ট হয়ে যাবে'।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত সবজি ও ধান খেতের তেমন ক্ষতি হয় নি। তবে নিচু এলাকার কিছু জমিতে সবজির খেতে পানি জমে গেছে। ঝড়ো হাওয়ায় কিছু কিছু মাঠে ধানের গাছ নুয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত আরও তিন-চার দিন অব্যাহত থাকলে নিচু জমিগুলোতে জলাবদ্ধতার কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামীকাল রবিবার থেকে স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কথা।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার