সরকার ২৬ টাকা দরে ধান কেনার ঘোষণা দিলেও পঞ্চগড়ে ৪ ভাগের ৩ ভাগ কৃষকই এই সুবিধা পায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাই কৃষক বাধ্য হয়ে বাজারে ১৫ থেকে ১৭ টাকা কেজি দরে ধান বিক্রি করছেন। ফলে লোকসানে পড়েছেন অধিকাংশ কৃষক।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ২৬ টাকা কেজি দরে ১২ হাজার ১৪৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করার কথা রয়েছে। অধিক কৃষককে এই সুবিধায় আনার জন্য প্রত্যেক কৃষকের কাছ থেকে এক টন করে ধান কেনা হবে। এই হিসাব অনুযায়ী ১২ হাজার ১৪৪ জন কৃষক সরকারি গুদামে ধান দিতে পারবেন।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চগড়ে এবার আমন চাষ করেছেন প্রায় তিন লাখ কৃষক। ফলে সরকারি গুদামে নিশ্চিতভাবেই বাদ পড়বেন ৯৫ শতাংশ কৃষক। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৯৯ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে তিন লাখ ছয় হাজার ৩০২ মেট্রিক টন ধান। সরকারিভাবে ধান উৎপাদনের ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ ধান ঢুকবে সরকারি গুদামে।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ভাবে ধানক্রয়ে কৃষি বিভাগের তালিকায় লটারি অনুষ্ঠিত হওয়ায় পঞ্চগড় সদর উপজেলায় অধিকাংশ উঠেছে ভূমিহীন ব্যক্তির নাম। এতে তাদের নিজেদের ধান না থাকায় বেড়েছে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম। কৃষি বিভাগের তালিকাভুক্ত এসব ভূমিহীন কৃষকদের একেকটি কৃষি কার্ড এখন বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দরে।
এতে প্রকৃত কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের পর্যাপ্ত ধান মজুদ থাকার পরও লটারিতে নাম না ওঠায় সরকারের কাছে নির্দিষ্ট মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারছেন না তারা। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের মনগড়া তালিকা আর ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মের প্রতিবাদে ইতোমধ্যে হাড়িভাসা ইউনিয়নের কিছু কৃষক সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবরে একটি গণঅভিযোগও দাখিল করেছেন।
অপরদিকে ক্ষুব্ধ কৃষকদের দাবি, কৃষি বিভাগ থেকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে নিজেরা তালিকা তৈরি না করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে ঢালাও ভবে নাম সংগ্রহ করায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি ভূমিহীন ব্যক্তিদের স্ত্রীদেরকেও কৃষক হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে । এতে প্রকৃত কৃষকেরা বঞ্চিত হয়েছেন। আর যাদের কৃষি কার্ড নেই তাদেরও লটারিতে নাম উঠেছে এবং তাদের নতুন করে কৃষি কার্ড করে দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ্ আলম মিয়া বলেন, এবারের তালিকা করার ক্ষেত্রে ভূমিহীন, প্রান্তিক চাষি এবং ক্ষুদ্র চাষিদের ৬০ শতাংশ অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা আছে। এছাড়া এই তালিকা তৈরি করার জন্য আমরা মাত্র পাঁচদিন সময় পেয়েছিলাম। এতো অল্প সময়ের মধ্যে তালিকা তৈরি করায় কিছুটা গড়মিল হতে পারে। তবে প্রকৃত কৃষকরাই এই সুবিধার আওতায় আছে বলে তিনি দাবি করেন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. গোলাম রব্বানী বলেন, আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। আমার যোগদানের আগেই কৃষি বিভাগ এই তালিকা প্রস্তুত করেছে। আমি এসে শুধু লাটারি করার সময় পেয়েছি। লটারির সময় তালিকা সঠিক রয়েছে বলে কৃষি কর্মকর্তাো আমাকে জানিয়েছেন। তবে কৃষকদের অভিযোগের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক