প্রথমে শখ হলেও এখন আর শখ নেই। শখের কোয়েলগুলোই খামার গড়তে সহযোগিতা করেছে। এরপর ধীরে ধীরে দিন যতটা গড়িয়েছে ঠিক ততটাই বেকারত্ব ঘুচিয়ে নিজের আলোকিত দিনের সন্ধান পেয়েছে।
তিনজোড়া কোয়েল পাখি দিয়ে শুরু করে এখন তার খামারে রয়েছে তিন হাজার কোয়েল পাখি। এর মধ্যে দেড় হাজার ডিম ও দেড় হাজার মাংসের জন্য পালন করেন। প্রতিদিন তার খামারে ১৩০০ থেকে ১৫০০ কোয়েল পাখি ডিম দেয়।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেশরতা গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে আতিকুল ইসলাম আতিক এখন কোয়েল পাখি ও ডিম বেচে সফলতার পথে হাঁটছেন।
আতিকুল ইসলাম আতিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, কোয়েল পাখির খামারটি বাড়ির পাশেই। আতিকুল এবং তার পরিবারের লোকজন খামারের দেখাশুনা করে থাকেন। তার এই খামার থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ডিম বিক্রি হয় প্রায় দেড় হাজার। প্রতি ১০০টি ডিম বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। গত প্রায় ৬/৭ বছর পূর্বে থেকে শখের বসে সে কোয়েল পালন শুরু করেন। শখের বসে পালতে গিয়েই সেগুলো বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। শখের বশে কোয়েল পাখি পালন করলেও বর্তমানে এই কোয়েল পাখি নিয়ে চলছে তার বাণিজ্যিক অগ্রযাত্রা।
তিনি জানিয়েছেন, একটি কোয়েল পাখি বছরে প্রায় দেড়শ থেকে দু’শ ডিম দিয়ে থাকে। প্রতিটি ডিমের ওজন ১৫ থেকে ২০ গ্রাম। বাচ্চা ফুটানোর পর ২ মাস বয়স হলেই এসব কোয়েল পাখি ডিম দিতে শুরু করে। একটি মুরগীর ডিমের চেয়ে তিনগুণ বেশী ক্যালরী থাকে একটি কোয়েলের ডিমে। এছাড়া কোয়েল পাখির মাংস খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হওয়ায় দিন দিন কোয়েল পাখির চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া মুরগীর ডিম বা মাংসের চেয়ে কোয়েল পাখির ডিম-মাংসের দামেও বেশি পার্থক্য না।
তিনি বলেন, আগে বেকার ছিলেন। এখন খামার গড়ে বেশ ভাল আয় করতে পারছেন। তার ডিমগুলো পাইকারি ব্যবসায়িরা প্রতিদিন নিয়ে যায়। এছাড়া বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট ও হোটেল কর্তৃপক্ষ তার কাছ থেকে ডিম ও মাংসের জন্য অর্ডার করে থাকে। পরিবারের সদস্যরা তাকে সহযোগিতা করে বলে খামারটি আরো উন্নত হয়েছে। তিনি আগামী দিনে খামার আরো বড় করে গড়বেন বলে জানান।
এদিকে আতিকুলের এই কোয়েল পাখির খামার দেখে এলাকায় অনেক বেকার যুবক খামার গড়েছেন। তার এই খামারে উৎপাদিত কোয়েল পাখি এখন জনপ্রিয় হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে। তার খামারে উৎপাদিত ডিম দেখে এলাকার বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হবার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
বগুড়ার আদমদিঘি উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান জানান, আতিকুল এ বিষয়ে আমাদের কাছে কখনো কোন সহযোগিতা চায়নি। আমাদের সহযোগিতা ছাড়াই তিনি বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন। আগামীতে তার প্রয়োজন হলে বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা করার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হবে।
তিনি বলেন, হাঁস-মুরগির মতো কোয়েল পাখি পালন করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। কোয়েল পাখির রোগব্যাধি কম। এজন্য টিকা দিতে হয় না এবং কৃমির ওষুধও খাওয়াতে হয় না। অনেকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কোয়েল পাখি পালনকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল