অধ্যক্ষ অপসারণের একদফা দাবিতে তালা ঝুলছে নীলফামারীর ছমির উদ্দিন স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের ফটকে। দু’দিন থেকে এই অবস্থা চললেও স্বাভাবিক রয়েছে দাফতরিক কাজ এবং পাঠদান কার্যক্রম। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তালা খুলবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির আন্দোলরত শিক্ষকরা।
বিধি বর্হিভূতভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগ, শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরণ, ভাতা প্রদান বন্ধ ছাড়াও নিজস্ব নিয়ম কানুন প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে দীর্ঘদিন থেকে প্রতিবাদ করে আসলেও সমাধান না হওয়ায় একদফার দাবিতে গতকাল সোমবার থেকে এই কর্মসুচী শুরু করেছেন তারা।
অধ্যক্ষ মেসবাহুল হকের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে শহরের প্রানকেন্দ্রে হয়েছে মানববন্ধন কর্মসুচিও। আজ মঙ্গলবার সকালে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়, অধ্যক্ষের কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলানোর চিত্র। তবে স্বাভাবিক গতিতে চলছে দাফতরিক কার্যক্রম এবং পাঠদান।
সহকারী শিক্ষক তুষার কান্তি রায় বলেন, এখানে আমাদের শিক্ষক হিসেবে কোন মর্যাদা নেই। অপমান করা হয় ছাত্র কিংবা পরিচিত জনের সামনে। অধ্যক্ষ নিজের নিয়ম কানুন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই আমাদের সবার উপড়ে নেমেছে নির্যাতনের খড়গ।
সিনিয়র সহকারী শিক্ষক সুরেশ চন্দ্র রায় বলেন, আমি এখানে নয় বছর ধরে চাকুরী করছি। বর্তমান অধ্যক্ষ এসেছেন তিন বছর হলো যদিও তার নিয়োগ নিয়ে বৈধতার প্রশ্ন রয়েছে। তারপরও আমরা কাজ করছি কিন্তু তিনি আমাদের শিক্ষক হিসেবে মুল্যায়ন করেন না। মানসিকভাবে এমনকি অসৌজন্য মুলক আচরণ করে আমাদের সাথে। ছাত্রদের সামনে অপমান করার মতও ঘটনা রয়েছে।
গভর্নিং বডির সদস্য আমজাদ হোসেন জানান, বিষয়টি জানার পর আজ পর্যবেক্ষনে গিয়েছিলাম। অভ্যন্তরীন ভাবে শিক্ষকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে যা প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে। বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এর আগেও এটি হয়েছিলো। দীর্ঘদিন থেকে কমিটির মিটিং হয়না যার কারণে বলাও যাচ্ছে না কিছু।
বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ২০১২সালে স্কুলটি কলেজ শাখায় পাঠদানের অনুমতি পেলেও সে সময়ে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুলতান আলী অবৈধ ভাবে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এখনো একাডেমিক স্বীকৃতি পায়নি প্রতিষ্ঠানটি অনিয়মের কারণে। তার সময়ে (সুলতান আলী) ৭৫লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে সেটি মন্ত্রনালয় থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ঠ সব দফতরে দেয়া হয়েছে এবং তদন্তও হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সুলতান আলী অবসর নিয়েও প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে। এমপিও ভুক্ত প্রতিষ্ঠান কলেজে রুপান্তর হলে অধ্যক্ষ পদ সৃষ্টি হয় না সেক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকই দায়িত্ব পালন করার কথা কিন্তু এখানে হয়েছে ব্যতিক্রম।
তিনি জানান, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে ২০১৬সালের ২২ডিসেম্বর মেসবাহুল হক অবৈধ ভাবে নিয়োগ পেলেও কলেজ থেকে মাত্র ১৬হাজার টাকা বেতন হিসেবে নেয়ার কথা তার কিন্তু তিনি স্কুল অংশ থেকেও ২৫হাজার টাকা মিলে ৪১হাজার টাকা উত্তোলন করছেন প্রতি মাসে। এছাড়া শতভাগ বোনাস এবং বিভিন্ন ফান্ডের টাকা সুকৌশলে তছরুপ করছেন।
শিক্ষকরা অভিযোগ করছেন, প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকেই তিনি এককেন্দ্রিক নিয়ম কানুন জারী করেন। তার কারণে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানে।
অধ্যক্ষ মেসবাহুল হক বলেন, আমার নিয়োগ বৈধ না অবৈধ এটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। উচ্চ আদালত থেকে তদন্ত হয়েছে। আদেশ এখোনো হয়নি। আদেশে পর বোঝা যাবে এটির বাস্তবতা। তাছাড়া শিক্ষকরা আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ নিয়ে আন্দোলন করছেন সেটি মাননীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন মহোদয় এবং গভর্নিং বডির সদস্যগন অবহিত রয়েছেন। এ ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত দেবেন।
প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, শিক্ষকদের অভিযোগ মন্ত্রনালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া আগামী বৃহস্পতিবার শিক্ষক কর্মচারী এবং গভর্নিং বডির মিটিং আহবান করা হয়েছে সেখানে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। আমি চাই শিক্ষার পরিবেশ যেন ব্যাহত না হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৬২সালে স্থাপিত এই প্রতিষ্ঠানে কলেজ শাখায় (উচ্চ মাধ্যমিক) ছয়’শ জন এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে (এসএসসি) প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ণ করছে।
বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ