বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার
শিরোনাম
- চট্টগ্রামে এক উপজেলায় মিললো দুই অজ্ঞাত লাশ
- নিউইয়র্কের নতুন মেয়র মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের চেষ্টা
- টাঙ্গুয়ার হাওরে উচ্চস্বরে গান-বাজনা ও পার্টি আয়োজন করা যাবে না
- সাদেক খানের ১২ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
- ৮ ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি নিচ্ছে শাবিপ্রবি
- পরিবারসহ উমরাহ পালন করলেন প্রাণ গ্রুপের শতাধিক পরিবেশক
- নারায়ণগঞ্জে মাদক মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন
- রাজশাহীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ১২
- হাসিনাসহ ১২ জনের দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত
- নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ : ইসি আনোয়ারুল
- একনেকে ৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকার ১২ প্রকল্প অনুমোদন
- বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি
- পুরান ঢাকায় গুলিতে নিহত ব্যক্তি 'শীর্ষ সন্ত্রাসী' মামুন: পুলিশ
- পুরান ঢাকায় সিনেমা স্টাইলে গুলি, যা দেখা গেল সিসি ক্যামেরায়
- ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি
- দেশের সব জায়গায় চাঁদাবাজি হচ্ছে: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন
- দ্রুত সেবার ক্ষেত্রে সবার আগে জনগণ : ভূমি উপদেষ্টা
- পুরান ঢাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে
- খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিদেশ সফরে যাওয়ায় আমাকে প্লট দেওয়া হয়নি : রবি চৌধুরী
- গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা
শীতে বসতি হারিয়ে গাঙপাড়ায় দুর্বিষহ বসবাস
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী:
অনলাইন ভার্সন
খালে শহরের নোংরা পানির প্রবাহ। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। কিন্তু তার পাশেই বসতি গড়েছিলেন প্রায় ২৩০টি পরিবার। সহায়-সম্বলহীন দিনমজুর শ্রেণির এসব মানুষের এই আশ্রয়টুকুও আর নেই। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর তাদের উচ্ছেদ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এরপর থেকে এই শীতের ভিতর অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন রাজশাহী মহানগরীর গাঙপাড়া বসতির প্রায় দুই হাজার মানুষ।
বসতবাড়ি হারিয়ে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনজন। আর ঘর ভাঙা হবে, এমন কথাবার্তা যখন চলছিল তখন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরেকজন। বসতিবাসীর ঘর ভেঙে দেওয়ার পর কেউ কেউ পাশের কারও জমিতে কিংবা কারও বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। উদ্বাস্তু হয়ে কেউ কেউ নিয়েছেন বাড়ি ভাড়া। তবে এখনও অনেক মানুষ ভেঙে দেওয়া বাড়ির ভিটায় টিনের অস্থায়ী একটা ঘর তুলে বসবাসের চেষ্টা করছেন। একটা ঘরেই গবাদিপশুর সঙ্গে থাকছেন তারা। বন্ধ হয়ে গেছে শিশুদের পড়াশোনা। নিদারুণ কষ্টে আছেন তারা।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় বসতির বাসিন্দা ফিরোজা বিবির (৪০) সঙ্গে। ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার পর ওই ভিটাতেই টিন দিয়ে ছোট্ট একটা ঘর বানিয়েছেন তিনি। সে ঘরেই বৃদ্ধা মা সুরাতন বিবিকে (৭৫) নিয়ে থাকেন। ফিরোজা জানালেন, স্বামী মারা গেছেন ২৫ বছর আগে। তারপর ভাঙড়ি কুড়িয়ে সংসার চালান তিনি। ঋণ নিয়ে ইট দিয়ে দুটি ঘরও করেছিলেন। কিন্তু সেই ঋণ পরিশোধের আগেই তাকে ঘর হারাতে হয়েছে। এখন জমি কিনে কোথাও ঘর করার সামর্থ্য তার নেই।
বসতির বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন জানালেন, খালের দুই পাড়ে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দরিদ্র শ্রেণির লোকেরা প্রায় ৪২ বছর আগে বসতি গড়েন। পরিবার প্রায় ২৩০টি। মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। সবাই পড়েছেন চরম বিপাকে। মোফাজ্জল বললেন, তার বাড়ির সাথেই তার দর্জির দোকান ছিল। দর্জির কাজ করে সংসার চালাতেন। বাড়ি ভেঙে দেওয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন শ্বশুরবাড়ির বারান্দায়। কিন্তু দোকান করতে পারেননি। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
কোনো রকম নোটিশ ছাড়াই এলাকার বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ শুরুর দিন স্থানীয় এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বসতিতে যান। তিনি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসতিতে বসে থাকেন। এই শীতের মধ্যে উচ্ছেদ না করার জন্য তিনি কিছু দিন সময় চান। তিনি যতক্ষণ ছিলেন ততক্ষণ বাড়িঘর ভাঙা হয়নি। কিন্তু ফিরে আসার পরই চলতে থাকে ড্রেজার। মূহুর্তেই ভেঙে ফেলা হয় সবার ঘর।
বসতি উচ্ছেদের পর রিকশাচালক তৌফিক আলী আশ্রয় নিয়েছেন পাশের এক আমবাগানে। সেখানে তৌফিকসহ পাঁচটি পরিবার আছে। সবাই টিন দিয়ে অস্থায়ীভাবে দু’একটি ঘর করেছেন। তৌফিক বলেন, একটা ঘরেই তিন মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতে হচ্ছে। জমিওয়ালা এখান থেকেও চলে যাওয়ার জন্য এক মাস সময় দিয়েছেন। পরিবার নিয়ে এখন যাব কোথায়!
বসতির বাসিন্দা আবদুস সোবহান একজন দিনমজুর। বাড়ি ভেঙে দেয়ার পর তিনিও পাশের এক ব্যক্তির জমিতে টিন দিয়ে একটা ঘর করেছেন। ঘরে ঢুকে দেখা যায় দুটি চৌকি। এক ঘরেই থাকেন সোবহানের ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রী। থাকে গরু এবং ছাগলও। তার ভেতরেই রান্না করছিলেন স্ত্রী শাহিদা বেগম। তিনি বলেন, এই শীতের ভেতর কী যে কষ্টে পড়েছি তা বলে বোঝানো যাবে না।
এভাবে পুরো বসতির মানুষই ঘরবাড়ি হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। এলাকার লোকজন জানালেন, ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে দেয়ার পর টেনশনে এবং শীতজনিত রোগে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই এক মাসে আবদুস সালাম, সুফিয়া বেগম ও সায়েরা বেগম নামে তিনজন নারী-পুরুষ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর উচ্ছেদের কথাবার্তা যখন চলছিল তখন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান উম্মত আলী নামের আরেক ব্যক্তি। শীতে মারা যাওয়া সুফিয়া নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। সালামের স্ত্রী লতিফা বিবি বলেন, ঘর হারানোর পর স্বামীকেও হারালাম। এখন অন্যের বাড়ির রান্নাঘরে আশ্রয় নিয়েছি। জীবনে এতো কঠিন সময় আসবে ভাবিনি।
এই বিভাগের আরও খবর