বগুড়ার শাজাহানপুরে কৃষকের বন্ধু হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ ধান মাড়াই যন্ত্র। এ মাড়াই যন্ত্র এক বিঘা জমির ধান মাড়াই করতে সময় নিচ্ছে মাত্র ৪০ মিনিট। বিঘা প্রতি ধান মাড়াই করতে চার্জ নিচ্ছে ২৫০ টাকা। নিমিষেই বিঘার পর বিঘা জমির বোরো ধান মড়াই করে কৃষককে স্বস্তিতে রাখছে এই যন্ত্রটি। করোনা পরিস্থিতির কারণে কৃষি শ্রমিকের সংকট মোকাবিলায় বোরো চাষিরাও ভ্রাম্যমাণ ধান মাড়াই যন্ত্রে ভরসা রাখছে।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ওমরদিঘী বাজার এলাকার কৃষক এমদাদুল হক জানিয়েছেন, তিনি চলতি বছরে ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছেন। এরই মধ্যে কয়েকটি জমির ধান কাটা হয়েছে। ধান কেটে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি বিঘায় শ্রমিক খরচ গুনতে হচ্ছে ২৫শ থেকে ২৮শ টাকা। আর প্রতি বিঘা জমির ধান শ্রমিক দিয়ে মাড়াই করতে খরচ পড়ছে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা। তাই তিনি ধান মাড়াই যন্ত্র দিয়ে তার ধান মাড়াই করে নিচ্ছেন। এতে একদিকে খরচ কম অপরদিকে অল্প সময়ে মাড়াই কাজ সম্পন্ন হওয়ায় সহজেই ধান ঘরে তোলা যাচ্ছে।
উপজেলার খরনা ইউনিয়নের বনভেটী দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত হাসেন আলীর পুত্র সোহেল রানা জানিয়েছেন, তিনি ২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা খরচ করে ডিজেল চালিত একটি ধান মাড়াই যন্ত্র তৈরি করেছেন। যন্ত্রটি দিয়ে প্রতি ৩৫-৪০ মিনিট সময়ে ১ বিঘা জমির ধান মাড়াই করা যায়। এতে ডিজেল খরচ হয় ১শ’ টাকার। এ হিসেবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় যন্ত্রটি ১৮-২০ বিঘা জমির ধান মাড়াই করতে সক্ষম। ধান কাটার পর শুধু মাড়ায় করে দিচ্ছেন। এতে প্রতিদিন ডিজেল খরচ বাবদ খরচ হয় ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা।
আর যন্ত্রটি পরিচালনায় নিয়োজিত দুই জন জনবলের মজুরি বাবদ আরও ১ হাজার টাকা ব্যয় হয়। অপরদিকে প্রতি বিঘা জমির ধান মাড়াইয়ের চার্জ বাবদ ২৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন চার্জ আদায় হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। অপারেটর মজুরি ও ডিজেল খরচ বাদে দৈনিক নীট আয় ২ হাজার টাকা। তবে এ হিসেব শুধু ভরা মৌসুমের ক্ষেত্রে। মৌসুমের শুরু, মাঝামাঝি এবং শেষে ধান মাড়াইয়ের পরিমাণ কম-বেশি হওয়ায় মাড়াই যন্ত্রের দৈনিক আয়ও আনুপাতিক হারে কম-বেশি হবে।
শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরে আলম জানিয়েছেন, উন্নত দেশ গুলোর সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার দেশের পুরো কৃষি ব্যবস্থাকেই যান্ত্রিকীকরণের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যেই শাজাহানপুরে ৫০ ভাগ ভর্তুকী মূল্যে ৪টি কম্বাইন্ড হার্ভেষ্টার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। কৃষি কাজে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কৃষকরা লাভবান হবেন। পাড়া মহল্লায় ভ্রাম্যমান মাড়াই যন্ত্র ব্যবহারের ফলে শ্রমিক সংকট মোকাবেলার পাশাপাশি কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমবে।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন