পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের খয়েরবাগান এলাকায় রাঙাপানি সেতু সংলগ্ন বনবিভাগের দেড়শ গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। বনবিভাগের গাছ নিধনে বাধা দেওয়ায় বনবিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারিদের মারধর করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করছেন দেবীগঞ্জ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম।
অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বৃষ্টিপাতে দেবীগঞ্জ-ভাউলাগঞ্জ সড়কের রাঙাপানি সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। স্থানীয়রা দাবি করে বনবিভাগের কয়েক শতক বনভূমির জন্যই নদীর গতিপথ পাল্টে গিয়ে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি জেলা সমন্বয় সভায় উঠে আসে। পরে সেখানে ওই অংশটুকু নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় খনন করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কোন নিয়ম না মেনেই শুক্রবার সকালে হঠাৎ করে দুটি স্কেভেটার মেশিন দিয়ে সেতু সংলগ্ন কয়েক শতক জমির বনভূমি খনন শুরু করে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী লোকজন নিয়ে পুরো কাজের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। একে একে ওই বনভূমির প্রায় দেড়শ জারুল গাছ উপড়ে ফেলা হয়। যে যার মতো গাছগুলো নিয়ে চলে যায়। এ সময় গাছ উপড়ে ফেলতে বাধা দিলে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী রেঞ্জার আনোয়ারুল ইসলামকে মারধর করেন। একই সাথে তার লোকজন বনবিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মারধর ও লাঞ্ছিত করে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলেও কোন সহযোগিতা পাননি বনবিভাগের কর্মীরা। নিরুপায় হয়ে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।
দেবীগঞ্জ বন বিভাগের রেঞ্জার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে গাছগুলো উপড়ে ফেলতো আমাদের কোন আপত্তি ছিলো না। খননের আগে আমাদের জানানোর কথা ছিলো। কিন্তু তা না করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তার লোকজন নিয়ে হঠাৎ করে খনন শুরু করে। একে একে সব গাছ উপড়ে ফেলে তারা। নিয়মতান্ত্রিক না হওয়ায় আমরা তাতে আপত্তি জানাই। এ সময় গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীসহ তার লোকজন আমাদের মারধর করে। তিনি নিজে আমার গায়ে হাত তুলেছেন। তার কাছে আমরা এটা কোনভাবেই আশা করিনি।
দেবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ওই জায়গাটুকু নদীবক্ষের জায়গা, বনবিভাগের নয়। সেখানে কিছু গাছপালা ছিলো। ওই জায়গাটুকুর জন্য নদীটির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। এবার সেতুটির দুই পাশের দেড়শ মিটার সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েন ওই সড়ক ধরে যাতায়াতকারী লাখো মানুষ। তাই স্থানীয়দের দাবির মুখে মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সবার সিদ্ধান্তক্রমে নদীর গতিপথে বাধা হয়ে থাকা ওই অংশটুকু স্কেভেটার মেশিন দিয়ে খনন করে দেয়ার দেয়া হয়েছে। আমাদের কেউ বনবিভাগের কর্মীদের মারধর করেনি বরং তারাই আমাদের স্কেভেটার চালকদের মারধর করতে উদ্ধত হয়েছিল।
দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মমিনুল ইসলাম বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। সেখানে আমাদের কোন কাজও হচ্ছে না। স্থানীয়ভাবে খনন হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসান বলেন, আমি বন বিভাগের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমি শুনেছি সেখানে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল