পাঁচ বছরে সাত লাখ টাকায় সুদ হিসেবে পরিশোধ করেছেন ১১ লাখ টাকা। কিন্ত এরপরও আসলের জন্য চাপ দিতে থাকেন দুদ ব্যবসায়ী। নির্ধারিত সময়ে পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় মুঠোফোনে অকথ্য গালিগালাজ করেন। অপমানে আত্মহত্যা করেছেন। চিকুটে লিখে গেছেন, ‘সুদ ব্যবসায়ীর অপমানে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’ তার মৃত্যুর পরও মোবাইলে টাকা চাইলেন ওই সুদ ব্যবসায়ী।
আত্মহত্যা করা ওই ব্যক্তি বরগুনার পলাশ (৩৭) নামের এক বস্ত্র ব্যবসায়ী। শনিবার বেলা ১০টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের নলী বাজারের বাসার পেছনে মেহগনি গাছে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন পলাশ। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে মর্গে পাঠিয়েছে।
বেলাল হোসেন পলাশ নলটোনা ইউনিয়নের গর্জনবুনিয়া এলাকার মৃত শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে। তিনি নলী বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করতেন।
পলাশের পরিবার জানায়, ২০১৫ সালে বরগুনার পল্লী চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম সৌরভের কাছ থেকে প্রথমে তিন লাখ টাকা সুদ নেন। এরপর পর্যায়ক্রমে এভাবে তিনি ওই চিকিৎসকের কাছ থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা সুদ নেন। তিনি ওই টাকার সুদবাবদ ১১ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।
পলাশের স্ত্রী রোকসানা বেগম জানান, আসল টাকার কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ দেন সৌরভ। গত বুধবার সৌরভকে ওই টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্ত টাকা পরিশোধ না করায় বৃহষ্পতিবার পলাশকে অকথ্য গালাগাল করেন ওই সুদ ব্যবসায়ী। একপর্যায়ে অনুনয়-বিনয় করে শনিবার পর্যন্ত সময় নেন পলাশ। শনিবার ফজরের নামাজের পর সৌরভ টাকা চেয়ে পলাশকে ফোন দিয়ে গালিগালাজ করেন। অপমানে লজ্জায় ঘৃণায় ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে পলাশ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সাড়ে ৭টার দিকে আবারও পলাশের মুঠোফোনে কল করে টাকা চান সুদ ব্যবসায়ী সৌরভ। তখন পলাশের স্ত্রী রোখসানা ফোন রিসিভ করে সৌরভকে জানান, পলাশ আত্মহত্যা করেছে।
রোখসানা বেগম বলেন, ‘সৌরভের আসল সাত লাখের বিপরিতে আমার স্বামী ১১ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। এরপরও আসল টাকার জন্য আমার স্বামীকে গালিগালাজ করেছে। ঘৃণায়-অপমানে আমার স্বামী আত্মহত্যা করেছে। আমি এই সুদ ব্যবসায়ী সৌরভের বিচার চাই। আমার ছোট ছোট দুটো বাচ্চা নিয়ে এখন আমি দিশেহারা।’
এ ঘটনার পর ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন পল্লী চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম সৌরভ। বরগুনার ফার্মেসি পট্টিতে তার চেম্বারে গিয়ে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পলাশের মরদেহ উদ্ধার করে। তখন মৃত পলাশের জামার পকেটে চিরকুট পাওয়া যায়। এতে সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার অপমানে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন মর্মে লেখা আছে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুুলিশ। বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. শহীদুল ইসলাম মিলন জানান, এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। নিহতের পরিবার অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ