ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নতুন নিয়মে পৌরসভায় জন্মনিবন্ধন করতে এসে নানা হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়ছেন পৌর নাগরিকরা। এতে করে প্রতিদিনই পৌরসভায় জন্মনিবন্ধন করতে এসে হয়রানির শিকার হয়ে বিক্ষোভ করছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে নতুন নিয়মে জন্ম নিবন্ধন করতে এসে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় বছরের শুরুতে শিশুদেরকে স্কুলে ভর্তি করা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ অবস্থায় নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। ভুক্তভোগীরা জানান, আগে পৌরসভা থেকে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট নিতে শুধু পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিয়েই পাওয়া যেতো জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট। বর্তমানে নতুন নিয়মে পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপির পাশাপাশি পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধনের সার্টিফিকেট ও পৌরকরের কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
জন্মনিবন্ধনের সার্টিফিকেটের জন্য সরকার নতুর নিয়ম করায় পৌরসভার ভাড়াটিয়া নাগরিকরা তাদের সন্তানের জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট করাতে পারছে না। এতে করে তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। ভুক্তভোগীরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করার দাবি জানান।
জন্ম নিবন্ধনের জন্য আসা হালিমা আক্তার বলেন, আমি পৌরসভার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা। বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য পৌরসভায় জন্মনিববন্ধন সার্টিফিকেট নিতে এসেছি। জন্মনিবন্ধন ছাড়া স্কুলে ভর্তি করা যায় না। কিন্তু পৌরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকেরা জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেটের জন্য আমার কাছে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপির পাশাপাশি আমাদের জন্ম নিবন্ধনের সার্টিফিকেট ও পৌরকরের কাগজপত্র জমা দিতে বলেছে। আমাদের কাছে তো পৌর করের কাগজপত্র নেই। তাই বাচ্চার জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট করাতে পারছিনা। তিনি আগের নিয়মে যাতে জন্ম নিবন্ধনের সার্টিফিকেট পাওয়া যায় সে ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট করাতে না পারলে বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারবো না।
ভুক্তভোগী রহিম মিয়া জানান, বাচ্চার জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য যদি আমাদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপির পাশাপাশি আমাদের জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট দিতে হয় তাহলে আমরা আমাদের জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট দিব কিভাবে। তিনি বলেন, আমাদেরতো ভোটার আইডি আছে, তাহলে এখন আবার আমাদের জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেটের দরকার কি?
ভুক্তভোগী শিপ্রা রায় বলেন, আমার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য জন্মনিবন্ধন করি। পরে জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার পর দেখি মেয়ের নাম ভুল। পরে ঠিক করার জন্য পুনরায় জমা দেই। জমা দেয়ার ২৫দিন পর জানতে পারি পৌরসভার সার্ভার নষ্ট। গত বুধবার যোগাযোগ করলে তারা জানান, নতুন নিয়মে সংশোধন করার কোন নিয়ম এখনো আসেনি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাহলে আমি আমার বাচ্চা কিভাবে স্কুলে ভর্তি করব।
পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওমর ফারুক জীবন বলেন, নতুন নিয়মে জন্মনিবন্ধন করতে এসে অভিভাবকরা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। অভিভাবকদের আইডি কার্ড থাকলে তাদের জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেটের দরকার কি? আর ভাড়াটিয়া বাসিন্দারা পৌরকরের কাগজপত্র দিবে কিভাবে? পৌর সভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফ ভান্ডারী বলেন, আগে অভিভাবকদের জন্মনিবন্ধন ছিল। পরে জাতীয় পরিচয়পত্র করার পর জন্ম নিবন্ধনের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন নতুন নিয়মে জাতীয় পরিচয়পত্রের পাশাপাশি অভিভাবকদেরকেও জন্মসনদ দিতে হয়। এই সমস্যায় প্রতিদিন মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
জন্মনিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম বলেন, নতুন নিয়মে জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট তৈরী করতে গিয়ে তাদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দিলে জন্মনিবন্ধন ফরম পূরণ করা যাচ্ছেনা। পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির নতুন নিয়মে জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট নিতে এসে নাগরিকদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, সরকার আইন করেছে। আমাদেরতো কিছু করার নেই। তিনি নাগরিক ভোগান্তি লাঘবে বিষয়টি বিবেচনা করতে সরকারের কাছে দাবি জানান।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল