মৃত্যুর আগে বাবার ভিটা খুঁজে পেতে চান আকালি বেগম ওরফে ময়না। জন্মের পরপরই বাবা-মাকে হারিয়ে ৬ বছর বয়সে কজের মেয়ে হিসেবে ঠাঁই হয়েছে ঢাকা শহরে। একমাত্র বড় ভাইয়ের সংসারে ভাবির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ওইটুকু বয়সে প্রতিবেশি এক চাচির হাত ধরে ঢাকায় চলে আসেন।
নাম পরিবর্তন করে আকালি থেকে হয়ে যান ময়না। বর্তমানে আকালি বেগমের বয়স ৪৯ বছর। প্রথমে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় এক ব্যক্তির বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে জীবন শুরু করেন। ৪৩ বছর থেকে ঢাকায় বসবাস করছেন। এর মধ্যে বিয়েও হয়েছে তার।
স্বামী আরশাদ মিয়া রিকশা চালায়। আকালি বেগম ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে বুয়ার কাজ করেন। একমাত্র মেয়ের বয়স ১৮ বছর। এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ঢাকার পশ্চিম নাখাল পাড়ার ১০৭/বি বাসায় থাকেন।
মুঠোফোনে আকালি বেগম বলেন, বাবা-মায়ের স্মৃতি মনে নেই। তবে বাবার নাম সমেত মিয়া এবং বড় ভাই সমসের আলী এটুকু মনে রয়েছে। গ্রামের নাম উলাপুর। কোনো জেলায় বাড়ি এটাও ঠিক করে বলতে পারছি না। ঢাকায় আসার পর বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কাজ করে পেট বাঁচিয়েছি। সব সময় বাড়ির কথা মনে পড়ে। কিন্তু ঠিকানা জানা না থাকায় মনের ইচ্ছা পূরণ হয়নি। দেখতে দেখতে বয়স হয়ে গেছে। শেষ বয়সে যদি বাবার ভিটা ও বড় ভাইয়ের মুখটি একবার দেখতে পেতাম তা হলে মরেও শান্তি পেতাম।
ছোট বেলার ছবি তোলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালের দিকে ঢাকায় আসার মাসখানেক পরে আমরা তিনজন কাজের মেয়ে এক সাথে ছবিটি তুলেছিলাম। একমাত্র মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করে ভাল ঘরে বিয়ে দিতে চান। ঢাকা শহরে এসে ময়না হলেও আকালি বেগম তার মায়ের দেওয়া নাম বলে তিনি জানান। তিনি তার জন্মস্থান খুঁজে পেতে চান।
আকালি বেগম বর্তমানে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা (একাউন্স) নুসরাতের বাড়িতে ছুটা বুয়া হিসেবে কাজ করছেন। নুসরাত বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সে আমাদের বাসায় কাজ করছে। বাপ দাদা বাড়ি ও জন্মস্থানের নাম না জানা থাকায় সব সময় দুঃখ করে। জেলার নাম বলতে না পারলেও ধারণা করা হচ্ছে তার বাড়ি রংপুর অথবা কুড়িগ্রামের উলিপুর হবে। কারণ আকালি নামটিও ওই অঞ্চলের বলে মনে হয়।
বিডি প্রতিদিন/এমআই