মাদারীপুরের শিবচরে দুই শিশুকে যৌন নির্যাতনে তিন লাখ টাকায় সালিশ মীমাংসা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে হওয়ার ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. রহিমা খাতুন এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের মাদারীপুরের উপ-পরিচালক আজহারুল ইসলামকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। শিগগিরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে সালিশ করার সাথে ইউপি চেয়ারম্যানের জড়িত থাকার বিষয়টি রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ও শিবচর থানা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি উত্তর বহেরাতলা ইউনিয়নের একটি গ্রামে দুই শিশু কন্যাকে স্থানীয় আকমন মাদবর (৫০) নামে এক ব্যক্তি জাম্বুরা খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে যৌন নির্যাতন চালায়।
পরে বিষয়টি জানাজানি হলে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে উত্তর বহেরাতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন হায়দার হাওলাদার নির্যাতিত শিশুকন্যার বাড়িতে সালিশ মীমাংসার বৈঠক করেন। সালিশে অভিযুক্ত আকমন মাতবরকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা, সেই সাথে ১০টি বেত্রাঘাত করে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেন সালিশদাররা।
কিন্তু সালিশ করা হলেও চেয়ারম্যানের প্রভাবে এলাকার কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। এছাড়া সালিশির ১৬দিন পেরিয়ে গেলেও নির্যাতিত দুই শিশুর পরিবারকে চেয়ারম্যানের করা জরিমানার তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়নি। এছাড়া স্থানীয়ভাবে চাপের মুখে রাখা হয় ওই শিশু দুইটির পরিবারকে।
একপর্যায়ে পুলিশ বিষয়টি জানতে পারলে ৮ মার্চ রাতে শিবচর থানায় সালিশের বিষয়টি এজাহারে উল্লেখ করে অভিযুক্ত আকমন মাতবরকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি মো. মিরাজ হোসেন।
সালিশ প্রসঙ্গে উত্তর বহেরাতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন হায়দার হাওলাদার বলেন, আমি সালিশে যেতে চাইনি। কিন্তু এলাকার মুরুব্বিরা আমাকে সালিশে ডেকে নিয়ে গেছে। আমি মেয়ে পক্ষকে বলেছিলাম আপনারা থানায় যান, তারা থানায় যায়নি।
শিবচর থানার ওসি মো. মিরাজ হোসেন বলেন, আমরা যৌন নির্যাতনের ঘটনায় চেয়ারম্যানের সালিশ মীমাংসার খবর পেয়েই এলাকায় পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। পরে নির্যাতিত দুই শিশুর অভিভাবকদের থানায় ডেকে এনে নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয়ভাবে ইউপি চেয়ারম্যানের সালিশের কথা উল্লেখপূর্বক অভিযুক্ত আকমনকে আসামিকে করে মামলা নিয়েছি।
বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে এলে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে বুধবার গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। এ ব্যাপারে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, শিশু নির্যাতনের মতো ঘটনা চেয়ারম্যান সালিশি কোনো অবস্থাতে করতে পারে না। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট প্রদান করলে পরবর্তী সময়ে সালিশির সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই