১৮ অক্টোবর, ২০২১ ১৯:১৪

বাংলাদেশ প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশের পর সেই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশের পর সেই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা

বাংলাদেশ প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়েছে কিশোরগঞ্জের চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিতর্কিত সহকারী শিক্ষিকা মেহবুবা রায়নার বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, রবিবার রায়নার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনলাইন ভার্সনে “পাঁচ বছর চাকরিকালীন নয় মাসও বিদ্যালয়ে যাননি” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরও জানান, বিভাগীয় মামলার একদিন পর শিক্ষিকা রায়না সোমবার করিমগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। 

করিমগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মফিজুল হক জানান, সোমবার দুপুরে ডাকযোগে মেহবুবা রায়নার পদত্যাগপত্র পেয়েছেন তিনি। তবে পদত্যাগপত্রে নানা অসঙ্গতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, রায়না পদত্যাগপত্রে কবে থেকে অব্যাহতি চান, সেই তারিখ উল্লেখ করেননি। শুধু তাই নয়, পদত্যাগপত্রে তার সামনে স্বাক্ষর করতে হয়, তিনি সেটা না করে ডাকযোগে পাঠিয়েছেন। তাছাড়া তার পদত্যাগের বিষয়ে তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কিছুই অবগত নন বলেও জানান তিনি। এ বিষয়গুলো উল্লেখ করে রায়নাকে পত্র দেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

করিমগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, রায়না ২০১৬ সালের শুরুতে চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা পদে যোগদান করেন। যোগদানের প্রায় তিনমাস পরই মেডিকেল ছুটিতে চলে যান তিনি। ২০১৬ সালের ২ মার্চ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১৩ দিন বিনা বেতনে মেডিকেল ছুটি ভোগ করেন তিনি। ছুটি কাটিয়ে বিদ্যালয়ে যোগদানের পর আবারও মেডিকেল ছুটি। এমনিভাবে বেশ কয়েকবার মেডিকেল ছুটি কাটান তিনি। পরে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। সেটাও অনিয়মিত। 

বার বার মেডিকেল ছুটির অজুহাতে তিনি গোপনে ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করে বর্তমানে মাস্টার্স ডিগ্রিতে পড়ছেন।
সবশেষ ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সনের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত মেডিকেল ছুটি কাটান রায়না। করোনাকালীন সময়ে তিনি একবার এসে যোগদানও করেন। করোনাকালে ক্লাশ বন্ধ থাকলেও ক্লাশের বাইরে কিছু কার্যক্রম চালু ছিল। কিন্তু রায়না সেটাতেও অংশগ্রহণ করেননি। করোনার বন্ধের পর ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলা হলেও বিনা নোটিশে চারদিন অনুপস্থিত থাকেন রায়না। পরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর এটিইও বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে রায়নাকে না পেয়ে তার বেতন বন্ধসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেন।
এর আগে ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর বিভাগীয় মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রায়নার ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করা হয়। এরপরও তাকে বিদ্যালয়ে ফেরানো যায়নি। 
এ অবস্থায় করিমগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গত ২৩ সেপ্টেম্বর তাকে শোকজ করেন। প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে তিনি যে জবাব দিয়েছেন, সেটা গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে তিনি জানান, এ বিষয়ে বেতন বন্ধসহ বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সুপারিশ করা হয়েছে।  

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর