কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ঘুমন্ত মায়ের কোল থেকে নিয়ে ১৬ দিন বয়সী নবজাতককে বালতির পানিতে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নবজাতকের নাম আয়ান ইসলাম। ভৈরব পৌর এলাকার কালিপুর মধ্যপাড়ার মো. ইদ্রিস মিয়া ও সাকিলা বেগম দম্পতির প্রথম সন্তান আয়ান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে নিজ ঘরে আয়ানকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন মা সাকিলা। রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন দাদী শামসুন্নাহার বেগম। রান্নার ফাঁকে শামসুন্নাহার দেখতে পান সাকিলা ঘুমিয়ে থাকলেও পাশে আয়ান নেই। আয়ানকে না পেয়ে চিৎকার চেচামেচি করার সময় ইদ্রিস মিয়ার সৎ ভাই দাউদ মিয়া এসে বাথরুমে গিয়ে বালতির পানিতে আয়ানকে ডুবে থাকতে দেখেন। বালতি থেকে তুলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়রা জানায়, ইদ্রিস মিয়া পেশায় টিভি মেকানিক। সাকিলার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলায়। দেড় বছর আগে তারা বিয়ে করেন। আয়ান তাদের প্রথম সন্তান। ১৪ দিন আগে স্বাভাবিক প্রসব হয়। ইদ্রিসের বসত ঘরটি টিনশেডের। ঘরের সঙ্গে যুক্ত বাথরুম। ঘর থেকে বের হয়ে বারান্দা দিয়ে বাথরুমে আসা যাওয়া করতে হয়।
সাকিলার দিন কাটে আয়ানের দেখাশোনা করে। দুপুর ১১টার দিকে আয়ান ঘুমিয়ে পড়ে। তখন আয়ানকে জড়িয়ে ধরে সাকিলাও ঘুমিয়ে পড়েন। সাড়ে ১১টার দিকে আয়ানের দাদি রান্না ঘর থেকে এসে দেখতে পান সাকিলার পাশে আয়ান নেই। সাকিলাকে ঘুম থেকে জাগান দাদি শামসুন্নাহার। দুজনই চিৎকার শুরু করেন। তাদের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন এবং আয়ানের সন্ধান করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বাথরুগে গিয়ে বালতির পানিতে আয়ানকে ডুবে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়।
একমাত্র শিশুসন্তানের এমন মৃত্যুতে হাসপাতালে বার বার অচেতন হয়ে পড়েন মা সাকিলা।
আরিয়ানের দাদি শামসুন্নাহার বেগম বলেন, আমার চোখের আড়াল হবার সর্বোচ্চ আধাঘণ্টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। তবে কে বা কারা এবং কী কারণে নবজাতকের সঙ্গে এমন হিংস্র কাজটি করল- এর কিছুই ধারণা করতে পারছেন না তিনি।
বাবা ইদ্রিস মিয়া বাড়ির বাইরে ছিলেন। ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন তিনি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক স্বপ্না রাণী দত্ত বলেন, আমরা নবজাতকটিকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। পানিতে ডুবে থাকার কারণে মৃত্যু হয়েছে। নবজাতকটির অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণে আমরা বিষয়টি পুলিশকে অবগত করি। পরে পুলিশ এসে মৃত নবজাতককে নিয়ে যায়।
নবজাতক হত্যার খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তরিকুল ইসলামসহ এসআই মোস্তাক ও রফিকুল ইসলাম।
ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বলেন, নবজাতকের মৃত্যুটি অস্বাভাবিক ও রহস্যজনক। এ কারণে ময়নাতদন্ত করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল