২য় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেহেরপুরের নৌকা প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। জেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ২টি ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থী জিতেছে। বাকি ৭টি ইউনিয়নে জিতেছে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থী। মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের একটিতেও নৌকা প্রার্থী জিততে পারেনি।
গাংনী থানার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টি ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থী জিতেছে। কোন কোন ইউনিয়নে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি নৌকা প্রার্থীরা। গাংনীর মটমুড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও মটমুড়া ইউনিয়নের সভাপতি আবুল হাসেম বিশ্বাস পেয়েছেন ৫৬০২ ভোট। এদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমেদ ১৮,৩২০ ভোট পেয়ে ২য় বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
এই ইউনিয়নের সবকটি কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগ সমর্থীত আবুল হাশেম বিশ্বাসের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। কাথুলী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলজার হোসেন পেয়েছেন ৪০০২ ভোট। গোলজার হোসেন নিজের কেন্দ্রেও জিততে পারেননি। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা ৫৭৮৪ ভোট পেয়ে ৩য় বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তেঁতুলবাড়ীয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন পেয়েছেন ৪০৮০ ভোট।
তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাজমুল হুদা বিশ্বাস ৬৮২৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। মুজিবনগর উপজেলায় দারিয়াপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মুস্তাকিম পেয়েছেন ২১৫৩ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ এস এম মাহবুব আলম রবি ৩৯৪৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। বাগোয়ান ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুতুব উদ্দিন ১০,৯৯২ ভোট পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়ুব হোসেন ১২,৭৩৪ ভোট পেয়ে ৩য় বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। মোনাখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম গায়েন ৫৭৯২ ভোট পেয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুর রহমান ৬২৩৫ ভোট পেয়ে ২য় বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন।
মহাজনপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউর রহমান নান্নু ৬০৪১ ভোট পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমাম হোসেন মিলু ৬১৩৭ ভোট পেয়ে ৩য় বারের মতো নির্বাচিত হয়েছে। আমাম হোসেন মিলু গতবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। গাংনীর বামুন্দী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওবায়দুর রহমান কমল ও সাহারবাটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মশিউর রহমান জয়লাভ করেছেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ হিসাবে একাধিক নেতা ও কর্মী জানিয়েছে মেহেরপুর আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল, যোগ্য প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক না দেয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে জামায়াত-বিএনপির একাত্মতা প্রকাশ।
মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীদের প্রশাসন কোন সহযোগিতা করেনি বরং বিদ্রোহী প্রার্থীদের সহযোগিতা করেছেন। এভাবে নৌকা প্রতীক দিয়ে নির্বাচন হলে আগামী প্রতিটি ভোটেই আমরা হারবো।
মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক বলেন, এবার মানুষ স্বতঃস্ফুতভাবে ভোট দিয়েছে। প্রশাসনের ভূমিকাও ছিলো নিরপেক্ষ। জামায়াত-বিএনপির কর্মীরা সহজে ভোট কেন্দ্রে যেতে পেরেছে। বিদ্রোহীরা দলের ২০ ভাগ ভোটে ভাগ বসিয়েছে। এর সাথে জামায়াত-বিএনপির ভোট যোগ হওয়ায় তারা জিতেছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ