দর্শকদের করতালি উৎসাহ আর উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে উপভোগ করলো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তন্ত্রমন্ত্রের ‘পাতা খেলা’। টানা দুই ঘণ্টার মনোমুগ্ধকর ‘পাতা খেলা’ দেখতে শত শত নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর সুজাপুর গ্রামবাসীর উদ্যোগে সুজাপুর সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিপুল সংখ্যক দর্শক সমাগমের মধ্যে গত শনিবার বিকালে অনুষ্ঠিত হয় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তন্ত্রমন্ত্রের এ ‘পাতা খেলা’ প্রতিযোগিতা।
খেলায় স্থানীয় খবিরুল ইসলামের দল দুইটি পাতা টেনে চ্যাম্পিয়ন হয় এবং একটি পাতা টেনে রানার আপ হন সাকির বাবলুর দল।
খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে একটি খাসি ও রানার আপ দলকে দুটো রাজ হাঁস তুলে দেয়া হয়।
দেখা যায়, মাঠের মাঝখানে পুঁতে রাখা হয় একটি কলাগাছ। গোড়ায় পানি ভর্তি মাটির ঘটি। চারপাশ চুন দিয়ে বৃত্তাকারে ঘিরে রাখা হয়। খেলার মাঠটিও বৃত্তাকারে চিহ্ন দেওয়া হয়। ঘটির পানিতে হাত ভিজিয়ে মাঠের বিভিন্ন পাশে খেলোয়াড়রা অবস্থান নিয়ে মাটিতে হাত রেখে শুরু হয় মন্ত্র পড়া। খেলায় ১০জন মন্ত্রী (ওঝা বা তান্ত্রিক) এবং হাত খেলা বা পাতা খেলা।
খেলায় মন্ত্রক বা তান্ত্রিক হিসেবে অংশ নেন খবিরুল ইসলাম, সাকির বাবলু, ছহির উদ্দিন, বাবলু হোসেন, আবু তাহের, মেহেদী হাসান, মনিরুল ইসলাম, মোকাররম হোসেন, মতিয়ার রহমান ও শ্যামল চন্দ্র। অন্যদিকে হাত খেলা বা পাতা হিসেবে অংশ নেন আক্তারুল ইসলাম, মুশফিকুর রহমান ও রহমত আলী।
খেলায় ওঝা বা তান্ত্রিক মন্ত্রের সাহায্যে বেশি পাতাকে বস করে দাগের বাইরে নিয়ে আসতে পারলে সেই ওঝা বা তান্ত্রিক জয়লাভ করবে। অন্যদিকে পাতা ওঝার মন্ত্রে নিজেকে স্থির রেখে দাগের ভেতরে থাকতে পারলে তাকেও বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হয়।
ওঝা তার লক্ষ্য পূরণে ‘দুই চোখে দেখাদেখি/চার চোখে টানাটানি/সপ্ত চোখে বস/ওরে বম/আমাকে ছাড়িয়া যদি অন্যদিকে যাস/দোহাই তোর-মহাদেব/দোহাই তোর- ঈশ্বরের মাথা খাস’ মন্ত্রের সাহায্যে পাতাকে বস করে দাগের বাইরে নিয়ে আসতে কৌশল অবলম্বন শুরু করেন। কিন্তু মন্ত্রের শক্তিতে অনেক পাতা পরাস্ত করে বৃত্তের ভেতরে অবস্থান করে। আবার অনেকে বৃত্তের বাইরে ছুটে চলে আসে।
এদিকে, সন্ধায় পাতা খেলা অনুষ্ঠানে ফুলবাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস ছাত্তার এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান বাবুল। এছাড়াও বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জু রায় চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নীরু শামনুন্নাহার, থানার ওসি আশ্রাফুল ইসলাম প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন