হত্যার পর আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ডেউয়াতলী এলাকার গৃহবধূ ইয়াসমিন আক্তারের গায়ে (২২ )। আগুন লাগিয়ে ফজরের নামাজ পড়তে যান তার স্বামী রেজাউল। হত্যার ১৮ দিন পর এই রহস্য উন্মোচন করেছে র্যাব। ইয়াসমিনকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তার স্বামী রেজাউল করিমকে। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১১ কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
তিনি জানান, আমরা জানতে পারি ২০১৭ সালের শুরুতে রেজাউল করিম ইয়াসমিনের বাড়ির (চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ থানার ডিংগাভাঙ্গা) একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতো। ওই বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার সুবাদে রেজাউল করিমের সাথে ইয়াসমিনের মা বেবী আক্তারের পরিচয় হয়। সেই সুবাদে আসামি রেজাউল করিম ঋণের কিস্তির টাকা নিতে ইয়াসমিনদের বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। আসা যাওয়ার একপর্যায়ে ইয়াসমিন আক্তারের সাথে রেজাউল করিমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের প্রেমের সম্পর্কটি এলাকায় জানাজানি হলে ইয়াসমিনের আগের স্বামী আনোয়ার হোসেনের সাথে ভিকটিমের তালাক হয়ে যায়। তাই খুব অল্প পরিসরে তাৎক্ষণিকভাবে রেজাউল করিম ইয়াসমিনকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। বিয়ে করে রেজাউল মালদ্বীপ চলে যায়।
পরবর্তীতে গত ৭ জানুয়ারি রেজাউল মালদ্বীপ থেকে দেশে ফিরে আসেন। পরিবারের অমতে, গত ১০ জানুয়ারি রেজাউল ইয়াসমিনকে তার বাড়ি বরুড়ার ডেউয়াতলী গ্রামে নিয়ে আসে। একদিকে রেজাউলের পরিবারের অমতে বিয়ে, অপর দিকে যৌতুকের চাপের কারণে তাদের পারিবারিক কলহ চরমে ওঠে।
রেজাউলের বরাত দিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, গত ১০ মার্চ বিকেলে স্বামীর সাথে ইয়াসমিন আক্তারের বিভিন্ন বিষয়ে কথা কাটাকাটি হলে স্বামী রেজাউল তাকে চড়থাপ্পড় দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। রাত ১০টার সময় রেজাউলের বাবা-মা ঘুমিয়ে গেলে পুনরায় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রেজাউল ক্ষিপ্ত হয়ে ইয়াসমিনের গলায় দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তার কিছুক্ষণ পরে রেজাউল তার গায়ে হাত দিয়ে দেখে তার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আছে। পরবর্তীতে সে বুঝতে পারে তার স্ত্রী আর বেঁচে নেই। এমতাবস্থায় সে সারারাত চিন্তা করতে থাকে তার স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি পরিবার ও লোকমুখে জানাজানি হলে সে কি জবাব দিবে। চিন্তা ভাবনার একপর্যায়ে ১১ মার্চ ভোর ৫টার দিকে সে তার স্ত্রীর সারা শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়। ঘর থেকে বের হয়ে প্রতিদিনের মতো ফজরের নামাজ পড়তে চলে যায়। নামাজ শেষে স্থানীয় লোকজনের আগুন লাগার বিষয়ে কোনো আওয়াজ না পাওয়ায় সে পারিবারিক কবরস্থান জিয়ারতের উদ্দেশ্যে চলে যায়। রেজাউল কবরস্থানে থাকা অবস্থায় স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে আগুন লাগার বিষয়ে জানতে পারে এবং তার বাড়িতে আসে। স্থানীয়দের আগুন নেভানোর সময় রেজাউলও তাদের সাথে আগুন নেভানোর ভান করতে থাকে। বলতে থাকে ঘরের ভিতর তার স্ত্রী ও তার বিদেশ যাওয়ার সকল কাগজপত্রসহ টাকা-পয়সা রয়েছে। বিষয়টি বলতে বলতে রেজাউল জ্ঞান হারানোর ভান ধরে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। তার স্ত্রীর জানাজা শেষে হাসপাতাল হতে সে আত্মগোপনে চলে যায়।
মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানিয়েছেন, এই বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা