দেড় থেকে দুই দশক আগেও ৩৬ গণ্ডায় অর্থাৎ ৩৬ হালিতে একশ আম বিক্রি হত রংপুর অঞ্চলে। বর্তমানে হালি কিংবা গণ্ডার কথা মানুষ ভুলে গেছেন। এ প্রজন্মের অনেকেই জানেন না গণ্ডা হিসেবে আম বিক্রি এক সময় ছিল এই অঞ্চলের ঐতিহ্য। তখন গণ্ডা ছাড়া আম কেনা-বেচার কথা ভাবাই যেত না।
প্রবীণদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একসময় রংপুরের আমের হাটে ৩৬ গণ্ডায় একশ (৩৬ হালিতে) আম পাইকারি বিক্রি হত। শহরের ওই আম আবার বিক্রি হত ৩২ গণ্ডায় একশ। ৮ হালিকে এক পোয়া, ১৬ হালিকে দুই পোয়া এবং ২৪ হালি আমকে তিন পোয়া বলা হত। আধুনিকতার ছোঁয়া এবং উৎপাদিত আমের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় গণ্ডার হিসাব মানুষ ভুলে গেছেন। এখন শুরু হয়েছে কেজির হিসাব। একধাপ এগিয়ে কয়েক বছর থেকে অনলাইনেও আমের ব্যবসা শুরু হয়েছে।
বুধবার থেকে রংপুরে হাড়িভাঙ্গা আম আনুষ্ঠানিকভাবে কেনা-বেচা শুরু হয়েছে। এসব আম কেজি কিংবা মণ হিসেবে বেচা কেনা হচ্ছে। এই প্রজন্মের অনেকেই জানেন না একসময় এই আম ৩২/৩৬ গণ্ডায় একশ হিসেবে বিক্রি হয়েছে।
প্রবীণ ব্যক্তি ইতিহাস লেখক মতিয়ার রহমান বসনিয়া বলেন, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাসে হরেক রকমের আমে বাজার ভরপুর থাকত। শহরে যারা আম বিক্রি করতে আসত তারা পদাগঞ্জসহ অন্যান্য হাটে ৩৬ গণ্ডায় এক’শ আম কিনে এনে শহরে ওই আম ৩২ গণ্ডায় বিক্রি করত। এখন হালি কিংবা গণ্ডার প্রচলন উঠে গিয়ে কেজিতে আম বিক্রি হচ্ছে। ১৫/ ২০ বছর আগেও ৩৬ গণ্ডায় একশ আম প্রকার ভেদে ২৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হত। ফজলি, কেরোয়া, এছাহাক তেলি, ছাইবুদ্দিন, আশ্বীনি, সাদা নেংড়া, কালা নেংড়া, কলিকাতা নেংড়া, মিশ্রী ভোগ, গোপাল ভোগ, আম্রপালি, সাদা রচি, চোচা, আঁটিসহ হরেক প্রজাতির আম গণ্ডা হিসেবে বিক্রি হত। এসব আমের সংখ্যা এখন কমে গেছে। বর্তমানে হাঁড়িভাঙ্গা প্রজাতির আমই বাজার দখল করেছে এবং হাড়িভাঙ্গা আমের চাহিদাই বেশি। একটি হাড়িভাঙ্গা আমের ওজন ৩শ থেকে ৪শ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় হাঁড়ি ভাঙ্গার চাহিদা দেশব্যাপী। তার পরেও তিনি অতীতের ঐতিহ্য ধরে রাখতে কিছু কিছু আম গণ্ডা অথবা হাালিতে বিক্রি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা