সুনামগঞ্জে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারিতে যে তিনজন আহত হয়েছেন তাদের সকলেই বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল ও ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ছাত্রলীগ পরিচয়ে মারামারি করতে এসে যুবদল-ছাত্রদল নেতাদের আহত হওয়ার ঘটনায় জেলার রাজনৈতিক অঙ্গণে তোলপাড়া সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাত ৯ টায় শহরের উকিলপাড়া বালুরমাঠ এলাকায় ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে পূর্ব বিরোধ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা রাজের ওপর হামলা চালায় একপক্ষ। এসময় রাজের হাতে থাকা ছুরির এলোপাতাড়ি আঘাতে আহত হন শহরের উত্তর আরপিননগর এলাকার মকসদ আলীর ছেলে মোশাহিদ রহমান কুটি, সোমপাড়া এলাকার নূরুল আহমদের ছেলে শামীম আহমদ ও মল্লিকপুর এলাকার সাদ্দাম মিয়ার ছেলে ইব্রাহিম আলী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার রাতে কুটি, শামীম ও ইব্রাহিম জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ চৌধুরী ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপনের পক্ষ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। রফিক-রিপনের বিরোধ ছিল ওপর ছাত্রলীগ নেতা রাজের সঙ্গে, যার ছুরিকাঘাতে ওই তিনজন আহত হন। রাজ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নোমান বখত পলিনের সমর্থক। আর রফিক-রিপন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন গ্রুপের রাজনীতিতে সক্রিয়।
এদিকে, এই ঘটনায় আহত মোশাহিদ রহমান কুটি বাদি হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নোমান বখত পলিনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা রাজকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজাতে পাঠানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মোশাহিদ রহমান কুটি শহরের আরপিননগরের বাসিন্দা। বিএনপি ও ছাত্রদলের প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকতে দেখা যায় তাকে। পৌর শহরের একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় ওই রাতে ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ বিরোধে যুক্ত করা হয় কুটিকে। কুটির সাথে ঘটনাস্থলে যান যুবদল নেতা শামীম ও ইব্রাহিম। এদের মধ্যে শামীম যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। আর জামাত নেতা সাদ্দাম মিয়ার ছেলে ইব্রাহিমও যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয়। এদিকে, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে যুক্ত ওই তিন ছাত্রদল ও যুবদল নেতার দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিতি ও দলীয় অফিসে বসে সেলফি তোলার একাধিক ছবি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
প্রত্যক্ষদশীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে শহরের উকিলপাড়া এলাকার উত্তরা কফি হাউসে পূর্ববিরোধ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা রাজের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ চৌধুরী ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপনের কথা কাটাকাটি হয়। এসময় বিষয়টি মিটমাট করতে এসে ব্যর্থ হয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নোমন বখত পলিন। পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে পার্শ্ববর্তী ভবনে পলিনের অফিসের সিঁড়িতে আশ্রয় নেন রাজ। এসময় ছাত্রদল-যুবদল নেতাদের সঙ্গে নিয়ে রফিক-রিপনসহ ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ সেখান থেকে রাজকে ধরে নিয়ে আসতে চাইলে হাতে থাকা ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি চালিয়ে তিনজনকে আহত করেন রাজ। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় ছাত্রলীগ নেতা রাজকে আটক করা হয়। আহতদের চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নোমান বখত পলিনের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘটনার সময় ছাত্রদল-যুবদল নেতাদের সহায়তায় রফিক-রিপন কর্তৃক ছাত্রলীগ নেতা রাজকে ধরে নিয়ে আসতে গেলে একাই ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তিনজকে আহত করেন রাজ। এরপর পলিনের বড়ভাই সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত নিজেই রাজকে পুলিশে সোপর্দ করেন। অথচ এই ঘটনার জেরে পরদিন যে মামলা দায়ের করা হয় সেখানে অদৃশ্য ইঙ্গিতে পলিন বখতকে হুকুমের আসামি করা হয়। সেইসাথে বিশাল দে, তানজিলুর রহমান ও ইফতি বখত নামের অপর যে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে তাদের কেউই মারামারিতে যুক্ত ছিলেন না বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায় পাঁচজনকে আসামি করে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার রাজকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজাতে পাঠানো হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজ স্বীকার করেছে যে, তার ছুরির আঘাতে ওই তিনজন আহত হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের তদন্ত অব্যাহত আছে। সময়মত আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ