বগুড়ায় তীব্র দাবদাহে বাড়ছে রোগের প্রকোপ। তবুও জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের।
প্রচণ্ড রোদের কারণে বগুড়া জেলার ঘরে ঘরে ঠাণ্ডা কাশিতে ভুগছেন অনেকেই। দিনে রোদের কারণে প্রচণ্ড গরম আর রাতে কিছুটা গরম প্রশমিত হওয়ার কারণে ঠাণ্ডা জ্বরে ভুগছে সাধারণ মানুষ তেমনটাই বলছে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা।
প্রচণ্ড গরমে কাজ করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে বগুড়ার নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে বগুড়ার সকল উপজেলার পৌর শহর ও গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসও কোনো কাজে আসছে না। এ গরম থেকে প্রশান্তি পেতে মানুষজনকে গাছপালার নিচে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে ঘেমে গিয়ে ঠাণ্ডা জ্বর হয়েছে। ওষুধ খেয়েছেন, কমেনি। দুই একদিন দেখবেন না কমলে চিকৎসকের কাছে যাবেন।
বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার জাহাঙ্গীর জানান, গরমে কারণে তার পেটের সমস্যা হয়েছে। ডাব আর স্যালাইন খেতে হচ্ছে।
বগুড়া শহরের কালিতলা এলাকার বাসিন্দা শুভ্র রঞ্জন জানান, গত কয়েকদিনের গরমে তার শরীরে পানি কম দেখা দিয়েছে। তিনি ঠাণ্ডা শরবত জাতীয় খাবার খাচ্ছেন।
বগুড়া শহরের কাঁঠালতলা, সাতমাথা, তিনমাথা, চারমাথা, মাটিডালি, কলোনী, নবাববাড়ি সড়কের দোকানগুলোতে ডাবের দামও বেড়ে গেছে। এককেটি মাঝারি আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা করে। এর চেয়ে বড় ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা করে। আখের রস বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা গ্লাস।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. হালিমুর রশীদ জানান, জুন থেকে আগস্ট মাসে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা এমনিতেই বেশি হয়। এর মধ্যে দাবদাহ থাকায় হাসপাতালে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলার সদরের ভ্যানচালক সোনা মিয়া জানান, জীবিকার তাগিদে তীব্র গরমের মধ্যে গাড়ি নিয়ে তিনি বের হয়েছেন। বের হলেও দুপুরে তেমন একটা যাত্রী তিনি পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, পিচঢালা সড়কে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করাটা তার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
এদিকে তীব্র দাবদাহের কারণে পানিশূন্যতাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষজন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় হাসপাতাল ও প্রাইভেট চিকিৎসাকেন্দ্রের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ডায়রিয়া, সর্দি কাশি ও জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে শিশুসহ প্রতিটি উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ভাইরাসজনিত রোগে মানুষজন আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
অন্যদিকে গরমের কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ফলমূলের দামও বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ডাবের। প্রতিটি ডাব কয়েকদিন আগে যেখানে বিক্রি হতো ৬০-৮০ টাকায় সেখানে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকায়।
বগুড়া শহরের ঝাউতলা রাস্তার ডাব ক্রেতা রেজাউল করিম জানান, তীব্র দাবদাহের কারণে অন্য ফলের চেয়ে ডাবের চাহিদা বেড়েছে। এ সুযোগে ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বিক্রেতারা। একজন সাধারন শ্রমজীবি মানুষের জন্য এতো টাকা দিয়ে ডাব কিনে খাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সামির হোসেন মিশু জানান, বগুড়ার হাসপাতালে ডায়রিয়া সর্দি কাশি ও জ্বরে শিশু ও বৃদ্ধসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ডায়রিয়া রোগী কিছুটা কম হলেও বেশির ভাগই জ্বরের রোগী।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল